সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশেই নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন রেলসেতু


১৯১৫ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ তার মেয়াদকাল অতিক্রম করেছে ১০ বছর আগেই। ব্রিটিশ প্রকৌশলীরা ১৯১৫ সালে এটি নির্মাণ করেন। ব্রিজের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ১০০ বছর। মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৫ সালে। তবে এখনো ব্রিজের ওপর দিয়ে চলছে ট্রেন। মেয়াদোত্তীর্ণ ব্রিজ দিয়ে ট্রেন চলাচল ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে। এজন্য শতবর্ষী এ ব্রিজের পাশে নতুন আরেকটি রেলসেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশে নতুন রেলসেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের খসড়া প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলমান। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন রেলসেতুটি হাডিঞ্জ ব্রিজের ৩০০ মিটার উত্তরে নির্মিত হবে। এটির দৈর্ঘ্য হবে ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার। সেতুর সংযোগ লাইন হিসেবে দুই পাশে পাঁচ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই চূড়ান্ত হলে শুরু হবে সেতুর নকশার কাজ। সেতুর নির্মাণ ব্যয় হতে পারে ৯ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।

সূত্র আরও জানায়, রেল যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে সুবিধাদি প্রস্তুতিমূলক কারিগরি সহায়তা নামে একটি প্রকল্প রেলওয়েতে চলছে। এই প্রকল্পের আওতায় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (ডিবি) অর্থায়নে ১১টি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও ডিজাইনের কাজ চলমান। এরমধ্যে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণের সমীক্ষাও রয়েছে।

২০২৩সালে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করে রেলওয়ে। পরামর্শক হিসেবে যৌথ উদ্যোগে জাপানের ওসিজি, ফ্রান্সের ইজিআইএস, মালয়েশিয়ার এইচএসএস এবং বাংলাদেশের সুবেদ কনসাল্ট ইন্টারন্যাশনাল লিমিডেট কাজটি পেয়েছে। এ কাজে পরামর্শক খাতে ব্যয় হচ্ছে ১৯৩ কোটি ৬৪ লাখ ২৮ হাজার ৫০৬ টাকা।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে সেতুর প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশে নতুন রেলসেতু নির্মাণের প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। সেতু নির্মাণের জন্য এরইমধ্যে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। রেলসেতুর প্রকল্প পরিচালক, কনসালটেন্ট ও প্রকৌশলীরা মাঝেমধ্যেই পাকশীতে আসেন। তারা সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করছেন।’

হার্ডিঞ্জ ব্রিজের বর্তমান অবস্থা প্রকৌশলী বলেন, ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নিয়মিত মেইনটেনেন্স (রক্ষণাবেক্ষণ) করা হয়। এটি রেল চলাচলের জন্য এখনো উপযুক্ত রয়েছে। তবে ব্রিজে ট্রেনের গতিসীমা কমানো হয়েছে। কাগজে-কলমে এ ব্রিজে ২৫ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচলের অনুমতি রয়েছে। তবে ট্রেন ৩০-৩৫ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নিয়মিত মেইনটেনেন্স করা হলে ২০৪০ সাল পর্যন্ত এ ব্রিজ দিয়ে ট্রেন চলাচল সম্ভব হবে।’

পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা হাসিনা খাতুন জানান, প্রতিদিন হার্ডিঞ্জ ব্রিজ দিয়ে ২৮-৩০টি ট্রেন চলাচল করে। এরমধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন ১৮টি। অন্যগুলো সব মালবাহী ওয়াগন ও তেলবাহী ট্যাংকার। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ দিয়ে ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে চালকদের নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ব্রিজে ট্রেন চলাচলে এখনো পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। তবে ট্রেনের গতি কমাতে নির্দেশনা রয়েছে। এর কারণ হিসেবে আমরা যতটুকু জানি, মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রিজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যুদ্ধের পর এটি মেরামত করা হয় এবং ট্রেন চলাচলের গতি কমানো হয়।’

রেল যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে সুবিধাদি প্রস্তুতিমূলক কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের পরিচালক মো. আবিদুর রহমান বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশে নতুন রেলসেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চলছে। সমীক্ষা চূড়ান্ত হলে ডিজাইন তৈরি করা হবে। তারপর এটি রেল মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। সেখান থেকে সেটি পরিকল্পনা কমিশনে যাবে। সমীক্ষার কাজ ২০২৬ সালে শেষ হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ব্রিটিশ শাসনামলে আসাম ও ইস্টার্ন বেঙ্গলের যোগাযোগ সহজ করতে পদ্মা নদীর ওপর রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০০৮ সালে ব্রিটিশ সরকার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ প্রকল্পের অনুমতি দেয়। ১৯১০ সালে ব্রিজের কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ১৯১৫ সালে। এতে নির্মাণে ব্যয় হয় তৎকালীন চার কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার ভারতীয় রুপি। ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ উদ্বোধন করা হয়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ