আগে ভারত থেকে প্রতি মাসে যেখানে ১০০টি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রেন আসত, গত এক বছরে তা কমতে কমতে ২০টিতে এসে ঠেকেছে। এ কারণে রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিয়েছে রেলওয়ের পাকশী বিভাগে। ভারত থেকে ট্রেনের আসা-যাওয়া হ্রাস পাওয়ায় রেল পরিবহনে বড় ধাক্কার কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, গত এক বছরে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকা। পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগের আয় বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রেন আসা কমে যাওয়াকেই মূল কারণ বলে মনে করছে রেল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনাকে পণ্য পরিবহন খাতে বড় ধাক্কা হিসেবেও মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যাত্রী, পণ্য, পার্সেল, লাগেজ বিবিধ খাত মিলিয়ে আয় হয়েছিল ৪৭৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সেই আয় নেমে এসেছে ৪৬৪ কোটি ২৩ লাখ টাকায়। অর্থাৎ এক বছরে পাকশী বিভাগীয় রেলে রাজস্ব খাতের আয় কমেছে ৯ কোটি ২১ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, রাজনৈতিক অস্থিরতায় দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলাচলকারী ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রেন কমে যাওয়ার কারণেই এই আয় কমে যায়। পার্সেল ও লাগেজ খাতের আয়ও কিছুটা কমেছে। এ খাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ২০২৪-২৫ সালে তা নেমে ৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকায় এসে দাঁড়ায় বিভাগীয় বাণিজ্যিক কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ২৮ দিন ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। ওই সময় কোনো ট্রেন চলেনি। একই বছরের জুলাই মাসে বন্ধ হয়ে যায় আন্তঃদেশীয় বন্ধন এক্সপ্রেস। পাশাপাশি আগস্ট থেকে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রেনের সংখ্যা কমে গেছে।
২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর খুলনা-ঢাকা রুটে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস এবং বেনাপোল-ঢাকা রুটে রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস চালু হয়। ২০২৫ সালের ১৮ মার্চ যমুনা রেল সেতু চালুর পর বিভিন্ন শ্রেণির আসনে ৪৫ থেকে ১৪৫ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানো হয়। ফলে যাত্রী আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, রাজস্বে বড় ধাক্কা লাগে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল কমে যাওয়ার কারণে। নইলে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় ওই অর্থবছরেই রেলের আয় সবচেয়ে বেশি হতো।
পাকশী বিভাগীয় রেলের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা গৌতম কুমার কুণ্ডু বলেন, আয় কমার দুটি প্রধান কারণ হচ্ছে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল হ্রাস ও জুলাই-আগস্টে টানা ২৮ দিন ট্রেন বন্ধ থাকা। তবে সংকট কাটতে শুরু করেছে। তাঁর দাবি, বর্তমানে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রেন আসা-যাওয়া ধীরে ধীরে বাড়ছে। ফলে আগামী অর্থবছরে আয় বাড়বে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা সুজিত কুমার বিশ্বাস বলেন, আগে মাসে যেখানে ১০০টি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রেন আসত, কমতে কমতে এখন ২০টিতে এসে ঠেকেছে। ভারতীয় ট্রেন কমে যাওয়াতেই রেলের আয়ে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রেনের সংখ্যা অর্ধেকের নিচে নেমে আসা, প্রায় এক মাস সব ট্রেন ও বন্ধন এক্সপ্রেস বন্ধ থাকার কারণে আয় কমেছে।

0 মন্তব্যসমূহ