সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

পাবনায় পাটে হাসছে কৃষক


রনি ইমরান, পাবনা: পাট বাজারে তুলতে এখন দম ফেলার ফুরসত নেই পাবনার কৃষকের। এবার পাটের বাম্পার ফলনের পাশাপাশি দামেও বাজিমাত করছে জেলার কৃষকরা। সোনালি আঁশে ফের সুদিনের স্বপ্ন দেখছেন তারা। 

শুক্রবার পাবনা সদর উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, পাট কাটা, জাগ দেয়া ও আঁশ ছাড়িয়ে শুকাতে দিতে ব্যস্ত রয়েছে চাষিরা। অনেক এলাকায় নারী-পুরুষ মিলেমিশে জলাশয়ে পাটের আঁশ ছাড়াচ্ছেন। আবার কেউ পাট শুকিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বাজারে। পাবনা সদরের গয়েশপুর ইউনিয়নের রহিমপুরে দেখা যায় রাস্তার পাশে পাট শুকাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সাবিনা ইসলাম নামের স্থানীয় এক কৃষাণী। 

তিনি বলেন, পাট বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে ঘরে তুলে রেখেছি। ৪ হাজার টাকা মণ হলেই ছেড়ে দেবো। প্রতিদিনই পাটের বাজারে খোঁজ খবর রাখছেন তিনি। সাবিনা আরো বলেন, এ বছর বৃষ্টি বেশি হওয়াতে জমির পাশেই পাট জাগ দেয়ার মতো যথেষ্ট পানি ছিল তাই বাড়তি লেবার খরচ লাগেনি। 

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় পাট বাজারে দেখা যায়, ভ্যান গাড়িতে করে কৃষকরা পাট আনতেই পাটের গাড়ি ঘিরে ধরছেন ব্যাপারীরা। বাজার চড়া হওয়াতে দরদাম আর হাঁকডাকে পাটচাষিরা বেজায় খুশি। তারা বাজারে নতুন পাট বিক্রি করছেন মণপ্রতি ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়। 

সাঁথিয়ার নন্দনপুরের কৃষক মো. নওশাদ বলেন, এবার পাটের দাম ভালো যাচ্ছে। প্রতি মণে ১ হাজার থেকে ১৪ শত টাকা লাভ হচ্ছে। বর্তমান বাজারে পাটের পাশাপাশি পাটকাঠির বাজারও ভালো। আগের বছরের চেয়ে তিন-চার গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পাটকাঠি। ফলে পাটচাষিরা উৎপাদন ও অঞ্চল ভেদে পাটের সঙ্গে বিঘাপ্রতি ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত আয় করছেন। 

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক বলেন, এ বছর পাবনা জেলার ৯ উপজেলায় ৪২ হাজার ৬৮৫ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে, যা আবাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। 

অর্থকরী ফসল পাটে কৃষকরা বাজিমাত করলেও বদ্ধ জলাশয়ে পাট কাটা জাগ দেয়াতে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় মাছ মারা যাচ্ছে। এতে শঙ্কায় রয়েছে জেলার মৎসজীবীরা। পাবনা সদর উপজেলায় অনেক এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, খাল বিল নদীতে সারি সারি করে পাট জাগ দেয়া হয়েছে। বদ্ধ জলাশয়ে পাট পচে পানি কালো রং ধারণ করেছে। এতে মাছের উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

পাবনা সদর উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে জলাশয়। এটি বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে খ্যাত। এই জলাশয়ে পাট কাটা জাগ দেয়াতে কয়েকশত মণ মাছ মারা গেছে বলে জানান বিল মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. আলতাফ হোসেন। 

তিনি বলেন, জলাশয়ে পাট কাটা জাগ দেয়াতে বড় রুই, কাতল, মৃগেল, কার্প, বোয়ালসহ বিভিন্ন প্রজাতির কয়েকশত মণ মাছ মরে গেছে। এতে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। এই জলাশয়ে মাছ চাষ করে আশপাশের গ্রামগুলোর শতশত পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে থাকে তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। দেশীয় মৎস্যসম্পদ রক্ষায় সরকারি সহযোগিতা কামনা করেন তারা। 

পাবনা সদরের মালঞ্চী ইউনিয়নের কৃষক মো. ইজিবর বলেন, এ বছর ২ বিঘার পুকুরে পাট জাগ দেয়াতে মাছ চাষ বন্ধ রেখেছি। এবার মাছের ক্ষতি পাটে পুষিয়ে নিবেন বলে জানান তিনি। 

পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, দীপক কুমার পাল বলেন, বদ্ধ জলাশয়ে পাট পচালে সেখানে মাছ বাঁচে না। পানিতে অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা যায় ও প্রচুর পরিমান ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হয়। পাটের মৌসুমে আমরা যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছি পাট চাষিদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ