সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

পাবনায় ভেজাল দুধ জব্দের ঘটনা ‘পরিকল্পিত’, বলছে প্রাণ



পাবনার চাটমোহরে প্রাণ ডেইরীর একটি গ্রামীণ দুধ সংগ্রহ কেন্দ্রে ডিটারজেন্ট মিশ্রিত দুধ প্রবেশের ঘটনায় স্থানীয় সংঘবদ্ধ একটি চক্রের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে, দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকার স্থানীয় ভেজাল দুধ সরবরাহকারী সংঘবদ্ধ চক্র প্রাণ ডেইরীকে নিম্নমানের দুধ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়ে কৌশলে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা দুধ সংগ্রহ কেন্দ্রের কয়েকজন কর্মীকে হাত করে ডিটারজেন্ট মিশ্রিত দুধ প্রবেশ করিয়ে প্রশাসনকে অবহিত করে যাতে প্রাণ ডেইরীর সুনাম নষ্ট হয়।

সাম্প্রতিক ঘটনায় প্রাণ ডেইরীর নিজস্ব তদন্তে এমন তথ্য উঠে এসেছে যা রোববার রাজধানীর বাড্ডায় প্রাণ ডেইরীর প্রধান কার্যালয়ে জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে প্রাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা বলেন, ‘ছাইকোলা ইউনিয়নে অবস্থিত ভিলেজ মিল্ক কালেকশন সেন্টারে স্থানীয় প্রশাসনের অভিযানে ডিটারজেন্ট মিশ্রিত দুধ শনাক্ত হওয়ার ঘটনায় আমরা অত্যন্ত বিস্মিত হয়েছি। এ ঘটনার পরপরই আমরা ওই দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করি এবং তাৎক্ষণিকভাবে কারণ অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। প্রাথমিক তদন্তে এ ঘটনায় স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ দুধ সরবরাহকারী চক্র দীর্ঘদিন ধরে প্রাণ ডেইরীকে নিম্মমানের দুধ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়ে দুধ সংগ্রহ কেন্দ্রের কয়েকজন কর্মীকে হাত করে কৌশলে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে উঠে এসেছে’।  

তিনি আরও জানান, ‘আমরা ঘটনার সাথে সম্ভাব্য জড়িত তিন কর্মীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছি। এছাড়া প্রাথমিক অনুসন্ধানে স্থানীয় চারজন দুধ সরবরাহকারীর নাম উঠে এসেছে। আমরা কোম্পানির পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছি’। 

রাজধানীতে প্রাণ ডেইরীর সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

ইলিয়াছ মৃধা আরও বলেন, ‌‘প্রশাসনের অভিযানে ভেজাল দুধ সরবরাহকারীর বাড়িতে সোডা, তেল ও ডিটারজেন্ট পাওয়ার ঘটনাটি প্রাণ মিল্ক কালেকশন সেন্টারের বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রচার হয়েছে, যা আমাদেরকে অত্যন্ত মর্মাহত করেছে। অন্য জায়গার ভিডিও কাট করে প্রাণ ডেইরীর বলে চালিয়ে দেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক’।    

প্রাণ ডেইরীর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে ছাইকোলা ইউনিয়নের কিছু দুগ্ধ সরবরাহকারীর দুধে গুণগতমানে সমস্যা পাওয়ায় দুধ নেয়া স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে তাদের কোড বাতিল করা হয়। এটি প্রাণ ডেইরী হাবের নিয়মিত তদারকির একটি অংশ। উক্ত কাজের রেকর্ড সফটওয়্যারে সংরক্ষণও করা হয় এবং কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। স্থায়ীভাবে যে সকল কোড বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে প্রাণ ডেইরীর সুনাম ক্ষুণ্ণ করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র করে আসছে এবং কর্মচারীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। ওই সংঘবন্ধ দল গত ০৭ মার্চ প্রাণ ডেইরীর একজন কর্মকর্তাকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করে এবং তাদের দুধ গ্রহণ না করলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। এ বিষয়ে স্থানীয় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এরপর ওই সরবরাহকারী চক্র প্রাণ ডেইরী এখানে কিভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে সেটি দেখে নেওয়ার হুমকি দিতে থাকে। মূলত কৌশলে তারা সাময়িক বরখাস্ত হওয়া তিন কর্মীকে হাত করে ওই দুধ সংগ্রহ কেন্দ্রে ডিটারজেন্ট মিশ্রিত দুধ প্রবেশ করিয়েছে এবং প্রাণকে দুধ দেয় বলে প্রশাসনকে অবহিত করে যা প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে’। 

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘প্রাণ সবসময় নিবন্ধিত সরবরাহকারীদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে থাকে এবং দুধ সংগ্রহ করার পর থেকে প্রক্রিয়াজাত হওয়ার আগ পর্যন্ত চারটি স্টেজে দুধ পরীক্ষা করে। প্রথম ধাপে গ্রামীণ দুধ সংগ্রহ কেন্দ্রে মিল্ক এনালাইজার এর মাধ্যমে দুধের ফ্যাট, এসএনএফ ও ডেনসিটি টেস্ট। এরপর মাদার হাবে নেওয়ার পর সেখানে কেমিক্যাল, সোডা, তেল, ডিটারজেন্ট, ওয়েল, সল্ট, ফরমালিন, পিএইচসহ ১৪ ধরনের টেস্ট করা হয়। এরপর নরসিংদীর কারখানায় দুধ নেওয়ার পর আরেক দফা সব ধরনের পরীক্ষা করা হয়। এরপর কারখানায় প্যাকেটজাত হওয়ার আগে ল্যাব টেস্টে দুধের গুণগত মান পরীক্ষা করে ভোক্তার নিকট সরবরাহ করা হয়’। 

তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি পাবনায় যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি একেবারে প্রাথমিক স্টেজে গ্রামীণ দুগ্ধ সংগ্রহ কেন্দ্রে ঘটেছে। খারাপ ও ডিটারজেন্ট মিশ্রিত কোন দুধ থেকে থাকলে সেটি হাবের টেস্টে সম্পূর্ণভাবে উঠে আসে এবং সেগুলো নষ্ট করা হয়’। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ