পাবনা জেনারেল হাসপাতালে এক নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে রোগীর স্বজনদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দিনগত মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে।
প্রথম দফায় মারধরের পর রোগী মারা গেলে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে আবার মারধর করা হয় ওই চিকিৎসককে।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. জাহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ভুক্তভোগী চিকিৎসকের নাম ডা. সুমাইয়া শান্তা।
হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত সোমবার (২১ জুলাই) দিনগত মধ্যরাতে ডায়রিয়ার সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা বাশের হাসান (৪৫) নামে এক রোগী। তার কিডনি জনিত সমস্যাও ছিল। এরপর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে স্বজনরা চিকিৎসকের খোঁজে ছুটতে থাকেন। নিচতলার মেডিসিন ওয়ার্ডে নাইট ডিউটিতে থাকা ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. শান্তা দ্রুত দোতলায় গিয়ে রোগীকে দেখতে শুরু করেন। চিকিৎসা চলাকালে রোগীর এক স্বজন ভিডিও ধারণ করতে থাকেন। এতে নিষেধের পর বাধা দিতে গেলে ফোনটি মেঝেতে পড়ে যায়।
এ ঘটনায় ওই চিকিৎসকের ওপর চড়াও হন রোগীর স্বজনরা। এরপর মারধর করেন। পরিস্থিতি খারাপ দেখে চিকিৎসক পাশের ওয়ার্ডে আশ্রয় নেন। এরপর সাড়ে ১২টার দিকে ওই রোগী মারা গেলে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে আবার তাকে মারধর করা হয় ও হাসপাতালে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।
এই ঘটনার পর পুরো হাসপাতালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপত্তার জন্য অন্যান্য চিকিৎসকেরা কোয়ার্টার থেকে ছুটে আসেন। পরে পুলিশ ও সিনিয়র চিকিৎসকরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী চিকিৎসক সুমাইয়া শান্তা বলেন, এই ঘটনা এখন নতুন নয়। কিছু একটা হলেই ডাক্তারদের মারধর করা হয়। আমরা কোথাও নিরাপদ নই। যেভাবে উনারা (রোগীর স্বজন) আক্রমণ করেছে তাতে আমি গতকাল মারা যেতে পারতাম। প্রত্যেকটি ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ আছে। যে অপরাধী সে কি ধরা পড়েছে?
তিনি আরও বলেন, আমি একটি প্রশাসনের অধীনে সেখানে কাজ করি। আমি চাইবো আমার প্রশাসন এ বিষয়টি হ্যান্ডেল করুক। বিষয়টি নিয়ে আমি খুবই ট্রমাটাইজড, এর বেশি কিছু বলতে চাই না।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, এ হাসপাতালে কোনো চিকিৎসা হয় না। রোগীর অবস্থা খারাপ হলেও ডাক্তার পাওয়া যায় না। চিকিৎসা দিতে অবহেলা করে চিকিৎসক ও নার্সরা। এসবের কারণে তাদের রোগী মারা গেছে। আবার মারা যাওয়ার পর মরদেহ হস্তান্তর না করে ঠেকিয়ে রাখা হয়। এগুলোর বিচার হওয়া উচিত।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, রোগীর অবস্থা শুনে সঙ্গে সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসক চিকিৎসা দিতে ছুটে গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে অসহযোগিতা করেন রোগীর স্বজনরা। মারধরও করেন। রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার পরও মারা গেলে আবারও চিকিৎসককে মারধর করেন। পুরো ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে।
তিনি বলেন, চিকিৎসা দিতে কোনো ধরনের অবহেলা করা হয়নি। রোগীর পরিস্থিতি অনুযায়ী চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিয়েছেন। রোগী মারা যাওয়ার পর তারা ভিন্ন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করায় মরদেহ হস্তান্তরে কিছুটা সময় লেগেছে। পুরো ঘটনায় হাসপাতালের কোনো অবহেলা নেই। হাসপাতালের পক্ষ থেকে বিষয়টি থানাকে জানানো হয়েছে।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বলেন, উভয়পক্ষই বিষয়টি আমাদের জানালেও কেউই লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
0 মন্তব্যসমূহ