পাবনা প্রতিনিধি: পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তরস্থ কবি বন্দে আলী মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও এডহক কমিটির সভাপতির যোগসাজসে সরকারি টাকায় নির্মাণ করা সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে ৪ রুম বিশিষ্ট একটি মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, আটঘরিয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আছিম উদ্দিনকে ৫ আগস্টের পর ওই বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। পূর্ববর্তী পূর্নাঙ্গ কমিটি ও খন্ডকালীন কমিটির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক মাহতাব উদ্দিন মার্কেট নির্মাণের প্রস্তাব উপস্থাপন করলেও প্রতিষ্ঠানের সুনামের স্বার্থে ওই মার্কেট নির্মাণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়। সুকৌশলে প্রধান শিক্ষক মাহতাব উদ্দিন পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের স্থানীয় এমপিকে ম্যানেজ করে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে ইচ্ছে মতো এডহক কমিটি অনুমোদন করে আনেন। কিন্তু এডহক কমিটিও প্রধান শিক্ষকের মার্কেট করার সেই প্রস্তাব আমলে নেয়নি। ৫ আগস্টের পর বিএনপির স্থানীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করে এডহক কমিটি অনুমোদন করে নেন। ইতোমধ্যে ওই কমিটিকে ম্যানেজ করেই প্রধান শিক্ষক স্কুলের পাশে সরকারি টাকায় নির্মিত সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে ৪ রুম বিশিষ্ট একটি মার্কেটের অনেকাংশের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছেন। বাকি রয়েছে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ।
মার্কেট নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে আটঘরিয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও কবি বন্দে আলী মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি আছিম উদ্দিন বলেন, স্কুলের উন্নয়নের স্বার্থে মার্কেট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেখান থেকে আয়কৃত অর্থ স্কুলের উন্নয়নে কাজে লাগানো হবে।
অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মাহতাব উদ্দিন বলেন, সততা স্টোর, ক্যান্টিন, সিকিউরিটি গার্ড রুম ও স্টোর রুম তৈরী করা হচ্ছে। জায়গাটা পতিত পড়ে ছিল। বেদখলের হাত থেকে রক্ষায় সেখানে ৪ রুমের মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। এ সকল কক্ষগুলো সাধারণত স্কুলের অভ্যন্তরে হওয়ার কথা কিন্তু হচ্ছে বাহিরে এমন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সদ্যুত্তর দিতে পারেননি।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কবি বন্দে আলী মিয়া আমাদের পাবনার গর্ব। তারই নামে এই প্রতিষ্ঠান। এটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে কোন মার্কেট করে সুনাম ক্ষুন্ন করার কোন মানে হয় না। প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিচালনা কমিটি অর্থ আত্মসাতের একটি ফন্দি বের করেছেন। দ্রুত মার্কেটটি বন্ধ করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। তারা বলেন, সরকারি টাকায় নির্মাণ করা প্রাচীর ভেঙ্গে বাইরে মার্কেট করার বিষয়টি রহস্যজনক বলেই মনে হচ্ছে। ইতোপূর্বেও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। যা ছিল আলোচিত।
দেবোত্তর বাজারের একাধিক সচেতন মানুষের দাবী, সরকারি টাকায় স্কুলের নির্মাণ করা প্রাচীর কিভাবে ভেঙে দিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ মার্কেট নির্মাণ করেন। উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগার উপর প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়ম, দূর্নীতি প্রকাশ্য হলেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই উপজেলা প্রশাসন তথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলাম রাঙা বলেন, ব্যক্তিস্বার্থে প্রধান শিক্ষক আমাকে দিয়ে বারবার এটা করাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। সুকৌশলে আমাকে কমিটি থেকে সরিয়ে দিয়ে তার ইচ্ছেমতো কমিটি বানিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার একটি নতুন ফন্দি এটেছেন। তিনি বলেন, ইতোপূর্বেও তার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিলাসবহুল বাড়ি গড়ার অভিযোগ রয়েছে। সন্তানদের দেশে বিদেশে নামিদামি ভার্সিটিতে পড়াচ্ছেন। তার নানা অনিয়ম, দূর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অভিযোগে দুদক, শিক্ষা দপ্তর, জেলা প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ করা হলেও অজ্ঞাত কারণে তিনি পার পেয়ে যাচ্ছেন। তার দাবী, দ্রুত শক্তিশালী অনুসন্ধান টিম তৈরী করে তার সকল অনিয়ম, দূর্নীতি অনুসন্ধান করে আইনের আওতায় আনা হোক।
আটঘরিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে আয়বর্দ্ধনশীল উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। তবে প্রতিষ্ঠান প্রধান একক সিদ্ধান্তে কিছু করার এখতিয়ার রাখেন না।
এ ব্যাপারে আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মিনহাজুল ইসলামের সাথে সরকারি নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিয়েও ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
0 মন্তব্যসমূহ