সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

অনলাইনে ইলিশ কিনে মহাপ্রতারনার ফাঁদে পাবনার ১১ জন


অনলাইনে ইলিশ ও ইলিশের ডিম বিক্রির নামে মহাপ্রতারনা : প্রতিদিন ঠকছে হাজারো মানুষ : অভিনব কায়দায় লক্ষ কোটি টাকা প্রতারক চক্রের পকেটে

বার্তা সংস্থা পিপ, পাবনা : অনলাইনে ইলিশ ও ইলিশের ডিম বিক্রির নামে মহাপ্রতারনার ফাঁদে পড়ে প্রতিদিন ঠকছে হাজারো মানুষ। অভিনব কায়দায় লক্ষ কোটি টাকা চলে যাচ্ছে প্রতারক চক্রের পকেটে। প্রতিদিন হাজারও মানুষ প্রতারনার স্বীকার হচ্ছেন। বিশেষ করে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে সারাদেশ জুড়ে এই প্রতারণা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। 

গত চারদিনে পাবনার ১১ জন ব্যাক্তি এ রকম প্রতারনার স্বীকার হয়েছেন। অন্য কেউ যাতে প্রতারণার স্বীকার না হয় সে জন্য তারা বিটিআরসির সহযোগিতায় এ সব মোবাইল নং সনাক্ত করে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে ঐ সব প্রতারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দাবী জানিয়েছেন। ‘রাজা’ ‘মহারাজা’ আড়াই থেকে তিন কেজি ওজনের চাঁদপুরের ইলিশ দেখিয়ে এবং ফেসবুকে পেজ খুলে নামকরা অভিনেতাদের বিজ্ঞাপন দিয়ে অবাধে এ সব প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।

সুত্র জানায়, গত ১১ এপ্রিল পাবনা শহরের কালাচাঁদপাড়ার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বার্তা সংস্থা পিপকে বলেন, ‘চাঁদপুর ইলিশ বাজার’ নামক একটি পেজের প্রচারনায় আকৃষ্ট হয়ে প্রতিটি সাড়ে ১২‘শ গ্রাম ওজনের ৪টি ইলিশ ৫ কেজি যার দাম ৩ হাজার ৫‘শ টাকা এবং ১ হাজার টাকা দরে ১ কেজি ইলিশের ডিমের মোট ৪ হাজার ৫‘শ টাকার অর্ডার দেন। ‘চাঁদপুর ইলিশ বাজার’ এর মোবাইল নং ০১৩৪০-৫১৭৪২৩ অর্ডার কমফার্ম করে বরফ ও অন্য খরচ বাবদ অগ্রিম ৫৫০ টাকা ঐ নাম্বারে বিকাশে পাঠাতে বলেন। তিনি ঐ বিকাশ নম্বরে ৫৫০ টাকা পেমেন্ট করেন। 

এরপর ১২ এপ্রিল ০১৮৭০২৭২৮৫৪ নম্বর থেকে ফোন করে বলা হয়, “আপনার ইলিশ ও ইলিশের ডিমের পার্সেল এসেছে”। মাছ ও ডিম নিতে হলে আপনাকে বিকাশ নং ০১৯৩৪৪৫৩৭১১ তে বাকী ৩ হাজার ৯৪৯ টাকা পাঠাতে হবে। কথা অনুযায়ী ওই ব্যক্তি বিকাশ নং ০১৯৩৪৪৫৩৭১১ তে ৩ হাজার ৯৪৯ টাকা পাঠান। এর পর থেকে ঐ কয়েকটি নম্বর বন্ধ রয়েছে।

পাবনা শহরের কাচারীপাড়া এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মীর্জা আজাদ গত ৯ এপ্রিল ইলিশের বাড়ী চাঁদপুর নামক পেজের মাধ্যমে অনলাইনে অর্ডার দিয়ে তিন কিস্তিতে ৯ হাজার টাকা ধরা খেয়েছেন। এর পর থেকে ঐ সব মোবাইল নং বন্ধ রয়েছে। পাবনা শহরের জোড়বাংলা রোডের গৃহিনী মাহবুবা কাজল একই রকমের প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন। এ রকম জানামতে গত চারদিনে পাবনার ১১ জন ব্যাক্তির ৯৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। 

এ রকম চাঁদপুর ইলিশের বাজার, ইলিশের বাড়ী চাঁদপুর, পদ্মার ইলিশের বাজার, চাঁদপুরের ইলিশের আরৎ, চাঁদপুরের টাটকা ইলিশ, হাফিজুল গনি ফিসিং হাউস, ইলিশ ঘাট চাঁদপুর, চাঁদপুর ইলিশ সেলবাজার, ইলিশের মেলা চাঁদপুর, অনলাইন ইলিশ বাজার, জামানের মাছের আরৎ, মাছের বাজার, চাঁদপুর ইলিশ বাজার-১ নামেসহ নানা নামে পেজ খুলে ইলিশ বিক্রির কথা বলে লক্ষ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।  

চাঁদপুরের সাংবাদিক ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, এরা অনলাইনে পেজ খুলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। তিনি বলেন, চাঁদপুরে ইলিশের কেজি কমপক্ষে ২ হাজার টাকা। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ওরা কিভাবে সাড়ে ১২‘শ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৭ ‘শ টাকা কেজিতে দিবে। এতেই বোঝা যায় এরা সবাই প্রতারক। তিনি আরও বলেন, এরা দেশের বিভিন্ন স্থান চাঁদপুরের নাম দিয়ে ফেজবুকে পেজ খুলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে।

পাবনা জেলা মৎস কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, এ ধরণের প্রচারনায় কেউ যেন প্রলুব্ধ না হয়। কারণ তাদের কাছে অনেকেই অভিযোগ করেছেন একটি প্রতারক চক্র অনলাইনে পেজ খুলে একাধিক মোবাইল সিম ব্যবহার করে মানুষের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর পাবনার সহকারী পরিচালক মাহমুদ হাসান রনি বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, এটি ভোক্তাদের সঙ্গে চরম প্রতারণা। আইনের মাধ্যমে এদের সনাক্ত করার জন্য চিন্তা ভাবনা চলছে। তিনি লোভনীয় অনলাইন প্রচারণায় প্রলুব্ধ না হওয়ার জন্য মানুষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ