একসময় গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতিটা বাড়িতে দেখা মিলতো বাঁশ, বেত, মাটি আর টিনের ছাউনিতে তৈরি ধানসহ দানাজাতীয় ফসল রাখার বড় আধার ‘গোলা ঘর’। দীর্ঘদিন ধান সংরক্ষণ করে রাখা যায় এসব গোলায়। এখন আর গ্রামে ঘরে ঘরে দেখা যায় না বিশেষ এই ঘর। তবে পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মোল্লা বাড়িতে কৃষি ঐতিহ্যের স্মৃতিস্মারক হয়ে এখনো দৃশ্যমান ‘গোলা ঘর’।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগের দিনে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ক্ষেতের ধান গোলায় মজুত করতেন। বসতবাড়ির আঙিনায় মাটি, বাঁশ আর টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি করতেন বিশেষ এই ঘর। বর্ষার পানির প্রবেশ ঠেকাতে গোলা বসানো হতো উঁচু জায়গায়। গোলায় প্রবেশের জন্য রাখা হতো একটি দরজা। চোরের হাত থেকে ফসল রক্ষায় দরজায় মারা হতো তালা। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন সেই জায়গাগুলো দখল করে নিয়েছে বিশেষ সুবিধাসম্পন্ন গুদামঘর। তবে পাবনার বেশ কিছু এলাকার কৃষকরা তাদের বাপ-দাদার স্মৃতি ধরে রাখতে এখনো যত্ন করে রেখেছেন গোলাগুলো।
সরেজমিন দেখা যায়, পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মো: আজমল হোসেনের বাড়ির আঙিনার এক পাশে আজও দাঁড়িয়ে আছে ৭টি ধানের গোলা। গোলা ৭টির বয়স প্রায় ১শ বছর। স্মৃতি ধরে রাখতে মাঝে মাঝেই এগুলো সংস্কার করেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, এক সময় প্রায় কৃষকের বাড়িতেই ধান মজুত রাখতে বাঁশ, বেত ও কাদা দিয়ে তৈরি করা হতো গোলা। গোলার ভেতরে ও বাইরে বেশ পুরু করে লাগানো হতো মাটির আস্তরণ। গোলার দরজা করা হতো উঁচুতে, যাতে সহজেই চোর ধান চুরি না করতে পারে। গোলা নির্মাণ করতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আনা হতো দক্ষ কারিগর।
বাড়িতেই তৈরি করা হতো ধানের গোলা। তবে এ পেশায় আর কাজ না থাকায় এখন ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন কারিগররা। অতীতে সমাজের নেতৃত্ব নির্ভর করতো কার কয়টি ধানের গোলা আছে তার ওপর। শুধু তাই নয়, কন্যা ও বরপক্ষের বাড়ির লোকজনও খবর নিতেন কার কয়টা গোলা রয়েছে। যা এখন নতুন প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্প।
আজমল হোসেন গোলার স্মৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে জানান, একসময় ভাদ্র মাসে জমিতে পানি থাকতো। সেই পানির আউশ ধান কেটে গোলায় রাখা হতো। তবে ভেজা ধান কেটে গোলায় রাখলে দ্রুত শুকিয়ে যেত। এছাড়া ইঁদুর ও পোকামাকড়ের উৎপাত থেকে ফসল রক্ষায় গোলা খুবই উপকারী। একটি বড় গোলায় সাধারণত ২০০ থেকে ৩০০ মণ পর্যন্ত ধান রাখা যেতো।
আজমল হোসেন বলেন, কালের সাক্ষী হিসেবে এখনো গোলাগুলো যত্ন করে রেখেছি। মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গোলা দেখতে আসেন, ছবি তোলেন।
0 মন্তব্যসমূহ