সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

পত্রিকা পড়ার নেশা থেকেই পত্রিকার এজেন্ট ভাঙ্গুড়ার দুলাল চন্দ্র দাস

 


আব্দুর রহিম, ভাঙ্গুড়া: পত্রিকা পড়ার খুব নেশা বাল্যকাল থেকেই । দরিদ্র পরিবারের সন্তান তাই বাল্যকাল থেকেই  দারিদ্রতার কষাঘাতে বড় হয়েছেন। পড়ালেখা মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করতে পারেননি আর্থিক কষ্টে। আট ভাই বোনের মধ্যে তিনি পিতা মাতার  তৃতীয় সন্তান। তাই অনেক ক্ষেত্রেই সংসারের দায়ে ভার তার কাঁধে এসেই চেপে বসেছিল। কিন্তু পত্রিকা পড়া থেকে তাকে সরাতে পারেনি। 

বলছিলাম পাবনার ভাঙ্গুড়া  বাজারের পত্রিকায় এজেন্ট  দুলাল চন্দ্র দাসের কথা। পত্রিকা পড়ার নেশা থেকে পেশায় হিসেবে বেছে নিয়েছেন  পত্রিকা এজেন্ট  দুলাল চন্দ্র  দাস।  আজ থেকে ৪৫ বছর পূর্বে এই নেশা তাকে পেয়ে বসে। এখনো তিনি পত্রিকা বিক্রির ফাঁকেই মনোযোগ সহকারে পত্রিকা পড়েন। বাকি জীবনটা পত্রিকার সঙ্গেই কাটাতে চান তিনি একান্ত  আলাপচারীতায় এমন তথ্যই জানিয়েছেন। আর ৩৮ বছর ধরে তিনি পত্রিকা বিক্রির পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। 

একান্ত আলাপচারিতায় জানা গেছে, দুলাল চন্দ্র দাস। বর্তমানে বয়স ৬৪। পাঁচ ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি তার পিতা মাতার তৃতীয় সন্তান। বাবা ননী গোপাল দাস ভাঙ্গুড়া বাজারের স্থায়ী  বাসিন্দা। পড়াশোনার জন্য প্রাথমিকের গণ্ডি পার করিয়ে মাধ্যমিকে ভর্তি হন তিনি। পড়াশোনার অদম্য ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাবার আর্থিক  কষ্টে ও সাংসারিক সচ্ছলতার অভাবে পড়াশোনা বেশি দূর এগিয়ে নিতে পারেননি। ফলে মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হতে না হতেই সংসারের প্রতি দায়িত্ব চলে আসে। যার কারণে পড়াশোনা আর তেমন হয়নি। কিন্তু মাধ্যমিকে পড়াশোনার সময় পেপার পত্রিকর পড়ার প্রতি তার নেশা তৈরি হয়। এক সময় তিনি বাড়ি থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে পেপারের দোকানে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে খবরের কাগজ পড়তেন। এজন্য তিনি বাড়ি থেকে বেশ কয়েকবার বকাও খেয়েছেন। বাবার বকুনি খেও তিনি তার পেপার পড়ার নেশা ছাড়তে পারেন নি। পরবর্তীতে এই নেশাই তাকে পত্রিকা বিক্রির পথে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে তিনি ভাঙ্গুড়া বাজারের পত্রিকা এজেন্ট নামে খ্যাত। 

তবে এখনো তিনি সুযোগ পেলেই ঘন্টার পর ঘন্টা তার দোকানে বসে খবরের কাগজ পড়ে থাকেন। দোকানে কেউ নতুন  এলেও তাকে সবিনয় বসতে দিয়ে খবরের কাগজ পড়তে দেন। এভাবে তিনি ৩৮ বছর ধরে খবরের কাগজের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছেন। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত তিনি  ঢাকা থেকে বিভিন্ন গাড়ী যোগে আসা জাতীয় দৈনিক পেপার গ্রহণ করে ওই দোকানেই বসে থাকেন এবং পেপার বিক্রি করেন। 

তিনি জানান, বর্তমানে দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় বিভিন্ন ধরনের জাতীয় পত্রিকার ২৫ রকমের কয়েকশত  পেপার তার অফিসে নিয়মিত এনে থাকেন।  কোন কোন দিন সকল পত্রিকা গুলি তার বিক্রি হয়ে যায়। আবার কোন কোনদিন কিছু পেপার অবশিষ্ট থেকে  যায়। এক্ষেত্রে তার নেই কোন দুঃখ। কারণ ব্যবসা করলে লাভ লস দুই স্বীকার করতে হবে। তবে সুখের বিষয় হল, পত্রিকা বিক্রির সুবাদে তিনি সমাজের শিক্ষিত ও সুশীল সমাজের মানুষের সঙ্গে পরিচিতি লাভ করতে পেরে ধন্য। আগামী দিনগুলিতেও তিনি এই পেশাকে শ্রদ্ধার সাথে  আঁকড়ে ধরে রাখতে চান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ