সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

ঈশ্বরদী-রূপপুর রেললাইন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

 


আজ বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঈশ্বরদী-রূপপুর রেললাইন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারী মালামাল পরিবহনের জন্য নির্মিত এই রেললাইনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি। 

এ সময় রূপপুর স্টেশন প্রান্তে পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান বিশ্বাস, পাবনার জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন, পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সীসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও রেলওয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

ঈশ্বরদী-রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রেলপথের প্রকল্প পরিচালক প্রধান প্রকৌশলী (পশ্চিম) আসাদুল হক বলেন, রেলবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকার রেলওয়ের উন্নয়নে জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে। এই নতুন রেল রুটে প্রচুর পণ্য পরিবহন হবে। এতে রেলওয়ের রাজস্ব আয় বাড়বে। 

এ প্রকল্পে ঈশ্বরদী বাইপাস টেক অব পয়েন্ট থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত ২৬.৫২ কিলোমিটারের এই রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৩৬ কোটি টাকা। স্টেশন চালু হওয়ার পর সরাসরি দেশ-বিদেশ থেকে পণ্যবাহী ট্রেনের মালামাল পরিবহন সহজ হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে আসবে আমূল পরিবর্তন। বাঁচবে সময় ও খরচ, বাড়বে দেশের রাজস্ব। 

পাশাপাশি ঈশ্বরদী ইপিজেড থেকে রপ্তানি পণ্য সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানো যাবে অল্প সময় ও কম খরচে। একইভাবে আমদানিকৃত কাঁচামালও বন্দর ইপিজেডে আসবে। শুধু রেলওয়ে নয়, সার্বিক পরিবহন খাতেই এই নতুন রেল রুটকে অসামান্য একটি অগ্রগতি বলে অভিহিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ভারতের জিপিটি ও বাংলাদেশের এসইএল ও সিসিএল অংশীদারত্বের ভিত্তিতে রেলপথটি নির্মাণ করা হয়েছে। ঈশ্বরদী বাইপাস টেক অব পয়েন্ট থেকে পাকশীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত ২৬.৫২ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ (ব্রডগেজ ও মিটারগেজ) রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। ৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই রুটে রয়েছে ১৩টি লেবেল ক্রসিং। 

প্রকল্প সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে ১৯১৫ সালে ঈশ্বরদীর পাকশী পদ্মা নদীর ওপর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ স্থাপনের কিছুদিন পর তৎকালীন সাঁড়াঘাট রেলস্টেশনের সন্নিকটে নির্মিত হয়েছিল বরফকল। সেখান থেকে বরফ পরিবহনের জন্য ব্রিটিশ রেল কর্তৃপক্ষ ঈশ্বরদী-পাকশী রুটে একটি রেললাইন নির্মাণ করেন। পরবর্তী সময় পাকশী বিভাগীয় সদর দফতরের রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার জন্য ওই রেলপথ দিয়ে শুধু বিনা পয়সার একটি ট্রেনের ব্যবস্থা করেছিল ব্রিটিশ সরকার। তখন এ রেলপথ দিয়ে শুধুই 'পাইলট' নামে তিন বগির একটি লোকাল ট্রেন চলাচল করতো। ওই ট্রেনে টিকিট কাটার প্রয়োজন না থাকার কারণে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আসা যাওয়া করতো। এছাড়া ঈশ্বরদী-পাকশী রেলপথে সাধারণ মানুষও বিনা পয়সায় ট্রেনে চলাচল করতো।  

নব্বই দশকের শুরুতে তৎকালীন বিএনপি সরকার কোনো কারণ ছাড়াই 'পাইলট ট্রেন' চলাচল বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় শুধু রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় সদর দফতরের কর্মকর্তাদের মোটর ট্রলি মাঝেমধ্যে চলতো এ রেলপথ দিয়ে।  

পরবর্তীতে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়েতে দৃশ্যমান উন্নয়ন শুরু হয়। সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে দীর্ঘ ২৬ বছর পরে 'পাইলট ট্রেন' চলাচল করার রুটের পরিত্যক্ত রেললাইনগুলো সরিয়ে ফের ঈশ্বরদী-রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প পর্যন্ত রেলপথসহ সংস্কার শুরু হয়।  

২০১৮ সালের পহেলা এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কর্মযজ্ঞ চলে প্রকল্পে। ভারতের জিপিটি ও বাংলাদেশের এসইএল ও সিসিএল অংশীদারত্বের ভিত্তিতে (জয়েন্ট ভেঞ্চার) ৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ঈশ্বরদী বাইপাস টেক অফ পয়েন্ট থেকে পাকশীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৫২ কিলোমিটার ব্রডগেজ-মিটারগেজ (ডুয়েল গেজ) রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে।

এছাড়া ১৩টি লেবেল ক্রসিং গেট, একটি 'বি' শ্রেণীর সুদৃশ্য স্টেশন ভবন, একটি প্লাটফর্ম, সাতটি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। ঈশ্বরদী জংশন রেলওয়ে স্টেশনের দুইপাশ জুড়ে লুপলাইন সংস্কার করা হয়েছে, প্লাটফর্ম উঁচু করার কারণে এখন একসঙ্গে ১৮টি ট্রেন এসে দাঁড়াতে পারবে, ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে। পুরোনো রিলে-ইন্টারলকিং পদ্ধতিকে বাদ দিয়ে কম্পিউটারইজড পদ্ধতি চালু হয়েছে। ফলে সুইচ কেবিন থেকে বাটন চাপলে ট্রেন আসা যাওয়ার রেললাইনটি ক্লিয়ার হবে সহজে, কোনো ট্রেন আউটারে এসে লাইন ক্লিয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। এ রেলরুটে মালপত্র আসা-যাওয়ার জন্য ট্রেনের যে লোকোমোটিভ ইঞ্জিন আসবে। তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য ঈশ্বরদী লোকোমোটিভ কারখানায় ডকপিট নির্মিত হয়েছে। এক সময়ে একটি মিটারগেজ ট্রেনের ইঞ্জিন, নয়টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন একসময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল জানান, উদ্বোধনের পরে এ প্রকল্পটি পরিপূর্ণ সক্ষমতায় আসলে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে যোগ করবে এক নতুন মাত্রা। ঈশ্বরদী বাইপাস টেক অফ পয়েন্ট থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার রেলপথে এ প্রকল্পটি উদ্বোধনের পর প্রকল্প কেন্দ্রে সহজে শুধু মালামাল-যন্ত্রপাতি পৌঁছানই না, ঈশ্বরদী-রূপপুর এলাকায় পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হলে এ অঞ্চলে তথা উত্তর জনপদের ব্যবসা-বাণিজ্যে আমূল পরিবর্তন আসবে। স্বল্প সময়ে, অল্প খরচে এ অঞ্চলের মানুষ পণ্যবাহী ট্রেনে করে সহজে মালপত্র আনা নেওয়া করতে পারবে। এক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য করা মানুষদের।  

ঈশ্বরদী-রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রেললাইন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুল হক আরও জানান, বর্তমান রেলবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলওয়ের উন্নয়নে এগিয়ে এসেছেন। এই প্রকল্প সম্পূর্ণ চালু হলে বাংলাদেশ রেলওয়েতে রাজস্ব আয় বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, এ অঞ্চলে ইপিজেড আছে, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র হয়ে গেল। ইতোমধ্যে ঈশ্বরদী ইপিজেড রেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাদের শিল্প-প্রতিষ্ঠানের মালামাল পণ্যবাহী ট্রেনের মাধ্যমে আনতে চান। আগে ঈশ্বরদী থেকে মোংলা বন্দর ব্রডগেজ লাইন ছিল। এই প্রকল্পের আওতায় মিটারগেজ-ব্রডগেজ কানেক্টিভ হয়ে গেল। পণ্যবাহী ট্রেনে মোংলা বন্দর থেকে ব্রডগেজ ট্রেন চলে আসতে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মিটার গেজ ট্রেন আসতে পারবে। এ প্রকল্পের জন্য পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অনেক মর্যাদা বেড়ে গেল।  


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ