সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

ভাঙ্গুড়ায় বসত বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা ভাংচুর, ৮ জন আহত



ভাঙ্গুড়া প্রতিনিধিঃ পাবনার ভাঙ্গুড়ায় বসত বাড়িতে ৯ জন সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে লাঠি সোঠা ও দেশীয় অস্ত্র হাসুয়া রড নিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাংচুর ৩ শিশু ও  ৩ মহিলাসহ ৮ জনকে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করেছে। গুরুতর আহতরা বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকৎিসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিকালের দিকে উপজেলা ভাঙ্গুড়া পৌর সদরের উত্তর সারুটিয়া ওয়াবদার বাধ সংলগ্ন মৃত আবুল হোসেন এর ছেলে বাবলুর বসত বাড়িতে এ হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদশর্ন করেছেন। এ বিষয়ে থানায় ৯ জনকে অভিযুক্ত করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মোঃ বাবলু।

লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১ অক্টোবর বাবলুর ভায়রা রফিকুল ইসলাম, তার শ্যালিকা তাদের সন্তানাদীসহ তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসে এবং তার ভায়রা তাদের রেখে চলে যায়। ২ তারিখ দুপুর ১২টার সময় তার ভায়রা রফিকুল ইসলাম পূনরায় তাদের বাড়িতে আসার জন্য সারুটিয়া রেলগেটে নেমে পাকা রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাবলুর সারুটিয়া বাড়িতে আসার পথে  বাবলুর সাথে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মোঃ মিজানুর রহমান (৩০) ও মোঃ মনিরুল ইসলাম (৪০), উভয় পিতা মোঃ মোসলেম বাবলুর ভায়রাকে দেখতে পেয়ে তার পথরোধ করে এবং তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। 

বাবলুর ভায়রা রফিকুল ইসলাম গালিগালাজ করতে নিষেধ করলে ভায়রাকে এলোপাথারী লোহার রড দিয়ে মাথা, পিঠে সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে ছিলাফুলা জখম করে। তখন স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করে। প

রবর্তীতে ঘটনার বিষয়টি জানতে পেরে বাবলু তার ভায়রাকে দেখতে ভাঙ্গুড়া হাসপাতালে যায়। সেই সুযোগে  বিকালের দিকে মোঃ বাবর আলী (৪৫), পিতা মৃত আবুল হোসেন, মোঃ মিজানুর রহমান (৩০),  মোঃ মনিরুল ইসলাম (৪০), উভয় পিতা- মোঃ মোসলেম, মোঃ সাগর (১৯), পিতা- মোঃ আঃ কাদের,  মোঃ কাদের (৫৫), পিতা- মৃত জাফর, মোঃ রেজাউল করিম নদা (৩৫), পিতা- মৃত আবুল হোসেন, মোছাঃ রাজিনা খাতুন (৩৫), স্বামী- মোঃ হবি, সর্ব সাং-সারুটিয়া, মোঃ হাসু (২৮), মোঃ মমিন (২৫), উভয় পিতা- এবাদ আলী, উভয় সাং- উত্তর মেন্দা, থানা-ভাঙ্গুড়া, জেলা-পাবনা গণ ২ বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে দলবদ্ধ হয়ে হাতে হাসুয়া, লোহার রড, কাঠের বাটাম, হাতুরী, বাঁশের লাঠি ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে বাবলু মতিউর রহমানের বসত বাড়ির উঠানে অনাধিকার প্রবেশ করে অতর্কিতভাবে হাসুয়া দিয়ে ঘরের টিনের বেড়া কুপিয়ে কাটা ও বাড়ি ঘর ভাংচুর করতে থাকে। 

তখন বাড়িতে থাকা লোকজন বাধা দিতে গেলে বাবলুর স্ত্রী মোছাঃ মালেকা খাতুন (৪৫), ছেলে মোঃ মতিউর রহমান (৩২), মেয়ে মালিয়া ত'ব্বাসুম সাঁথি (২৫) এবং তার জামাই আহম্মেদ ইমতিয়াজ কে হাতুরী, রড ও বাঠাম দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। এ সময় তারা তাদেরকে বাঁচানোর জন্য চিৎকার করলেও কেউ তাদের এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ করেন। এ সময় তাদের আক্রমণের হাত থেকে তিন শিশু রিদিতা ইসলাম (১০), রহিমা ইসলাম (৭) ও রোযা (১১মাস) রক্ষা পায়নি। শাশুড়ি মরিয়ম খাতুন (৭০) এর ডান হাতে জখম,  মালেকা খাতুন এর বাম পায়ে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে গুরুতর হাড় ভেঙ্গে যায় ও স্ত্রীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিল, ঘুষি মেরে ছিলাফুলা জখম করে। তার ছেলে মতিউর কে ধারালো হাসুয়া দিয়ে দিয়ে ডান পায়ের গোড়ালীসহ হাঁটুতে কুপিয়ে করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে পায়ে রগ কাটার চেষ্টা করে তার দুই পায়ে ও পায়ের গোড়ালীতে একাধিক সেলাই ও হাতে পায়ে গায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।  তার মেয়ে মালিয়া তাব্বাসুম সাঁথি (২৫) ও মেয়ের জামাই মোঃ ইমতেয়াজ আহমেদ (৩০)-কে তারা লোহার রড দিয়ে মাথায়, পিঠেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে ছিঁলাফুলা এলোপাথারী কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিলাফুলা জখম করে এবং লোকজনের সামনে তার মেয়ের পরনের কাপড় চোপড় টানা হেচড়া করে শ্লীলতাহানী করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন। তারা তার ভায়রার ছোট ছোট তিন ছেলে মেয়েদেরকেও মারপিট করে। পরবর্তীতে অভিযুক্তরা বাবলু মতিউরের বসত বাড়ির দরজা এবং মূল্যবান জিনিসপত্র ভাংচুর করে এবং  মেয়ে ও জামাইয়ের মোবাইল ভাংচুর করে ক্ষতি সাধন করে।  পরবর্তীতে বাবলু ঘটনার সংবাদ ডেয়ে দ্রুত বাড়িতে এসে  আহতদের চিকিৎসার জন্য ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, সারুটিয়া এলাকার বাসিন্দা বাবলু ও হাসনা আপন ভাই বোন। দুজনই পাশাপাশি বসবাস করেন । বাবলুর মেয়ে সাথি বড় হলে হাসনা তার বড় ছেলে মানিকের সাথে বিবাহ দিতে উঠে পড়ে লাগে। প্রথমে ববালু আপন বোনের ছেলের সাথে নতুন করে আত্মীয়তা করতে না চাইলেও  বোন হাসনার অনুরোধে পরে তা অগ্রাহ্য করতে পারে না বাধ্য হয়ে নিজের বোনের ছেলের সাথে মেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহ দেন। কিন্তু বিয়ের দেড় বছর পার হতে না হতেই হাসনা তার পুত্র বধূর (ভাতিজির) আচার আচরণ  মনে নিতে পারেনি। পরে এক সময় আবার পারিবারিকভাকেই গ্রাম্য পরিবশেই তাদের ছাড়াছাড়ি করিয়ে নেন। পরে হাসনার ছেলে  মানিককে অন্য স্থানে বিয়ে দেন আবার বাবলুর মেয়েকে অন্য স্থানে বিয়ে দেন। কিন্তু  রাস্তার ধারে ফুফুর (হাসনা) বাড়ি হওয়াতে বাবলুর নতুন জামাই মেয়ে আসা যাওয়ার পথে হাসনা অকথ্য ভাষায় মেয়ে ও নতুন জামাইকে উল্লেখ করে গালিগালাজ করতে থাকে। মূলত এই ঘটনাটি উভয়ের মধ্যে দিন দিন ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

এ ঘটনায় সেনা ক্যাম্প ভাঙ্গুড়াকে তাৎক্ষণিক অবগত করলে দায়িত্ব প্রাপ্ত সেনা সদস্য ঘটনাস্থলে গেলে অভিযুক্তরা পালিয়ে থাকায় কাউকে তারা পাননি। পরে ভাঙ্গুড়া থানায় ওই ৯জনকে অভিযুক্ত করে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

ঘটনার বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আর্থিক বিষয়াদি নিয়ে তাদের আপন ভাই বোনের মধ্যে দীর্ঘদিন দ্বন্দ চলছিল তারই ধারাবাহিকতায়  ঘটনার দিন সকালের দিকে ভাতিজা মতিউর রহমান তার আপন ফুফুকে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দেন এ ঘটনার পর দুপুর ও  বিকালের দিকে একাধিক ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তদন্ত সাপেক্ষ আইন গত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ