।। এবিএম ফজলুর রহমান।।
কঠোর পরিশ্রম, প্রবল মনের শক্তি, সততা, নিষ্ঠা, শ্রম, মেধা ও শৃংখলা একজন মানুষকে কত উপরে নিয়ে যেতে পারেন তার উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত পাবনার প্রয়াত সাংবাদিক মির্জা শামসুল ইসলাম। যিনি সততা, নিষ্টা, প্রচন্ড আস্থা ও মনোবলকে পূঁজি করে মফস্বল সাংবাদিকতায়কে শুন্য থেকে শিখরে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি শুধু সাংবাদিকতা করেই ক্ষ্যান্ত হননি; হয়েছেন দেশসেরা সমাজসেবক ও আর্দশ কৃষক। গড়ে তুলেছেন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
আজ (৩ অক্টোবর) মফস্বল সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃত ও পাবনা প্রেসক্লাব এবং বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি, পাবনার সাবেক সভাপতি, অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলার সিনিয়র ষ্টাফ রিপোর্টার মীর্জা শামসুল ইসলামের ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে পাবনা প্রেসক্লাব শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক স্মরণসভার আয়োজন করেছে। মরহুম মীর্জা শামসুল ইসলাম প্রায় অর্ধশত বছরের সাংবাদিকতায় সাহসী ও বস্তনিষ্ট সংবাদ, প্রতিবেদন ও প্রবন্ধের মধ্য দিয়ে মফস্বল সাংবাদিকতাকে উচ্চস্তরে নিয়ে যান। ক্ষুরধার লিখনীর মধ্য দিয়ে তিনি সারা দেশে ব্যাপক খ্যাতিও অর্জন করেন। ১৯৬০ সালে শিক্ষা জীবন থেকে শুরু হয় তার সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি হলেও সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহন করেন ১৯৬৪ সালে। সে সময় তৎকালীন দৈনিক বাংলা পত্রিকার প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে অবলুপ্তি পর্যন্ত ঐ পত্রিকায় সুনামের সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন। বিশেষ করে ৭০ এর দশকে দৈনিক বাংলায় তার পাবনা মানসিক হাসপাতাল, মানসিক রোগ এবং সেখানকার রোগীদের জীবনভিত্তিক প্রায় দুইশ পর্বের বিশাল এক ধারাবাহিক মানবিক প্রতিবেদন সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৬৭ সালে পাবনার ভূট্টা আন্দোলন, ৮০র দশকে পাবনার ১৯ পর্বের মাদক পরিক্রমাসহ তার বিভিন্ন্ সাহসী ও বস্তনিষ্ঠ প্রতিবেদন এবং ফিচার তাকে সারা দেশে পরিচিত করে তোলে। বিশেষ করে যে কোন বিষয় ভিত্তিক সংবাদ ও ফিচার তৈরির দক্ষতা এ প্রজন্মের সাংবাদিকদের জন্য অনুকরনীয়।
পেশাগত দক্ষতার স্বকৃতি স্বরুপ ১৯৭২ সালে দৈনিক বাংলা কতৃপক্ষ মফস্বল শহরে এবং পাবনায় প্রথম তাকে ষ্টাফ রিপোর্টার হিসেবে পদোন্নতি দেন। ১৯৭৬ সালে তিনি সিনিয়র ষ্টাফ রিপোর্টার হন। সে সময় থেকে তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহন করেন। এ ছাড়া ৭০ এ দশকে বাংলাদেশ বেতার এরপর মৃত্যর আগ পর্যন্ত প্রায় ২৫ বছর বাংলাদেশ টেলিভিশনে সাংবাদিকতা করেছেন। ১৯৬৮ সালে তিনি সাপ্তাহিক প্রবাহ নামে পাবনা থেকে একটি জাতীয় মান সম্মত পত্রিকা প্রকাশ করেণ। তার সম্পাদনায় এ পত্রিকাটি ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত হয়। ১৯৯১ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
এ ছাড়া কৃষিতে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৩ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি স্বর্নপদক ও ১৯৮৫ সালে বার্ড পুরস্কারে ভুষিত হন।
মরহুম মীর্জা শামসুল ইসলাম ১৯৪৪ সালের ১৪ জুলাই পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুর গ্রামে সম্ভ্রান্ত মীর্জা পরিবারে জন্ম গ্রহন করেণ। তিনি ১৯৯৯ সালের ৩ অক্টোবর ইন্তেকাল করেন। তার মেঝ ছেলে উৎপল মির্জা পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সম্পাদক ও মাছরাঙা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি ও উত্তরাঞ্চলীয় ব্যুরো প্রধান। ঢাকার বাইরে প্রথম ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) পুরুস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক। এ ছাড়া অন্যান্য সন্তানগন স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। পাবনা প্রেসক্লাব শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক স্মরণসভার আয়োজন করেছে।
লেখক : এবিএম ফজলুর রহমান, সাবেক সভাপতি, পাবনা প্রেসক্লাব। স্টাফ রির্পোটার দৈনিক সমকাল এবং এনটিভি, পাবনা।

0 মন্তব্যসমূহ