![]() |
অভিযুক্ত শিক্ষক ইফফাত মোকাররমা সানিমুন |
ভাঙ্গুড়া প্রতিনিধিঃ পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ব্যাংকার বান্ধবীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বান্ধবীর ১৫ ভরি স্বর্ণালংকারসহ ১২ হাজার টাকা চুরি করে উধাও হওয়ার ১ মাসেও অভিযুক্ত শিক্ষক ইফফাত মোকাররমা সানিমুন (৩২)কে আটক করতে পারেনি পুলিশ । এ ঘটনায় তারই বান্ধবী ও ব্যাংকার তানিয়া হক শনিবার বেলা ১১টার দিকে ভাঙ্গুড়া প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন।
অভিযুক্ত ইফফাত মোকাররমা সানিমুন উপজেলার সোহরাব হোসেন এর মেয়ে ও পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের আরাজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা। এদিকে ব্যাংকার তানিয়া হক ও তার ভাইকে মামলা দিয়ে হয়রানি করারও হুমকি প্রদানর করা হচ্ছে মর্মে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগও করেন ভুক্তভোগী। তবে পুলিশ বলছেন, আসামীকে আটকের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। হুমকির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী ব্যাংকার তানিয়া হক বলেন, তারই বান্ধবী সহকারি শিক্ষিকা ইফফাত মোকাররমা সানিমুন । গত ৫ জুলাই বিকালের দিকে তিনি ও তার বান্ধবী সানিজা ইয়াসমিন পপিসহ বিবাদী বিকেলে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে গহনা পড়ে সেজেগুজে চাটমোহর কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্টে বেড়াতে যান। উক্ত স্থান থেকে এসে পূনরায় রাতে তিনি তার সব গহনাগুলো আলমারীতে দেখেন। গহনাগুলো দেখার সময় সহকারি শিক্ষিকা ইফফাত মোকাররমা সানিমুন তার ঘরে উপস্থিত ছিল।
এদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনিসহ উক্ত বান্ধবী রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুমানোর পূর্বে অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষিকা ইফফাত মোকাররমা সানিমুন তানিয়া হকের অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে কফি বানিয়ে খাওয়ায়। উক্ত কফি খাওয়ার পর ব্যাংকার তানিয়া হকের মাথা ব্যাথা শুরু হয় এবং গভীর ঘুমিয়ে পড়েন।
পরবর্তীতে ৬ জুলাই সকাল অনুমান ১০ টার সময় ঘুম থেকে উঠে তার বান্ধবীকে ঘরে দেখতে না পেয়ে তার সাথে মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন । এ সময় অপর প্রান্ত থেকে তার বান্ধবী মোকাররমা সানিমুন প্রথমে ফোন রিসিভ না করায় তানিয়া হকের সন্দেহ হয়। পরবর্তীতে অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষিকা ইফফাত মোকাররমা সানিমুন জানায় যে, তার জরুরী কাজ রয়েছে। সেই জন্য সে বাস যোগে ঢাকায় চলে যাচ্ছে।
অতঃপর তানিয়া হকের হাত ব্যাগে লক্ষ্যে দেখেন যে, তার হাত ব্যাগের ভিতরে থাকা নগদ ১২ হাজার টাকা নেই। তখন তার সন্দেহ বেড়ে যায় এবং তার ঘরের আলমারীতে থাকা স্বর্ণের গহনাগুলো পরীক্ষা করেন। পরীক্ষা করে দেখেন যে, আলমারীতে থাকা স্বর্ণের ২ ভরি ৮আনা ওজনের ১ জোড়া চুর, যার মূল্য অনুমান ৩লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, স্বর্ণের ৪ ভরি ওজনের ২ টি হার, যার মূল্য অনুমান-৬ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, স্বর্ণের ১ ভরি ওজনের কানের দুল ১ জোড়া, মূল্য ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, স্বর্ণের ৩ টি ছোট কানের দুল ৩ জোড়া, যার ওজন ২ ভরি যার মূল্য ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, ১ ভরি ২ আনা ওজনের স্বর্ণের একটি চেইন মূল্য অনুমান ২ লাখ টাকা এবং ২ ভরি ওজনের স্বর্ণের বেসলেট ২টি, মূল্য অনুমান-৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ৬ টি স্বর্ণের আংটি, যার ওজন ২ ভড়ি, মূল্য অনুমান ৩লাখ ৬০হাজার টাকা গহনার বাক্সের ভিতরে নেই।
![]() |
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য পাঠ করেন তানিয়া হক |
এর পর অনেক বার সহকারি শিক্ষিকা ইফফাত মোকাররমা সানিমুন এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে ফোন করলেও আর তিনি তার মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি। এ বিষযে তার পরিবারের ভাই এবং পিতার সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা জানান, সহকারি শিক্ষিকা ইফফাত মোকাররমা সানিমুন এর সাথে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই।
এ ঘটনায় গত ৯ জুলাই ব্যাংকার তানিয়া হক বাদী হয়ে ভাঙ্গুড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মাললার এক মাস পার হলেও আসামীকে পুলিশ আটক করতে না পাড়ায় তিনি হতাশা প্রকাশ করেন। পক্ষান্তরে অভিযোগের পর ব্যাংকার তানিয়া হক ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে আসামী পক্ষ থেকে উল্টা মামলা করে আরও হয়রানি করা হবে বলে হুমকি প্রদান করেছেন। এমতাবন্থায় আসামীকে দ্রুত সময়ে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে হারানো গহনা ও টাকা উদ্ধার করতে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান। সংবাদ সম্মেলনের সময় তানিয়া হকের পিতা এনামুল হক ও তার ভাই মামুন উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যপারে জানতে অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষিকা ইফফাত মোকাররমা সানিমুন এর ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে একাধিক বার ফোন করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সেকেন্দার আলী জানান, সহকারি শিক্ষিকা ইফফাত মোকাররমা সানিমুন প্রায় এক বছর ধরে ছুটি নিয়ে ঢাকায় আছেন। মাঝে মাঝে এসে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দেখিয়ে আবার ছুটি নেন। ছুটি না দিলে উর্ধতন কর্মকর্তাদের দিয়ে ফোন করিয়ে ছুটি নেন। এমন দীর্ঘ দিন কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতে তারাও কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় আছেন।
এ ব্যপারে ভাঙ্গুড়া থানার ওসি মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশ আসামীদের ধরতে সর্বোচ্চ তৎপর চালিয়ে যাচ্ছে। যে কোনো সময় আসামী ধরা পড়বে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ঘটনার বিষয়ে জানতে সহকারি পুলিশ (চাটমোহর সার্কেল) আরজুমা আক্তার বলেন, অভিযোগ হওয়ার পর আসামী সাধারণত গা ঢাকা দেয়। আসামী যেহেতু ঢাকাতে থাকে। সে কারণে তাকে ধরতে একটু সময় লাগছে। পুলিশ সেখানেও অভিযান চালিয়ে ধরার চেষ্টায় অব্যাহত আছে।
0 মন্তব্যসমূহ