ডেঙ্গু মশা নিধন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, প্রচার ও করোনা ভাইরাস মোকাবিলার সরকারি বরাদ্দের ৪৩ লক্ষাধিক টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠায় পাবনার সাঁথিয়া পৌরসভার সাবেক দুই মেয়র মিরাজুল ইসলাম প্রামানিক ও মাহবুবুল আলম বাচ্চুসহ ১৯ জনের নামে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে দুদকের পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. মনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে সাঁথিয়া থানায় মামলাটি করেন।
মামলার প্রধান আসামি মো. মিরাজুল ইসলাম প্রামানিক (৫৮) সাঁথিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র। তিনি বোয়াইলমারী গ্রামের মজিবর রহমান প্রামানিক ছেলে। অপরজন মাহবুবুল আলম বাচ্চু (৪৮), তিনি কোনাবাড়িয়ার রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি সাঁথিয়া পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাঁথিয়া পৌরসভার সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন খান (৫৪), মো. শাহীনুজ্জামান (৫৩), পৌরসভার সাবেক হিসাবরক্ষক মো. আব্দুল বারিক (৪৯), কার্য-সহকারী আবু ইছা শফিউল আলম (৪৭), পৌরসভার প্রধান সহকারী মো. নুরুজ্জামান (৪৩), পৌরসভার এম.এল.এস.এস মো. নুরুল ইসলাম (৪৬), ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. হামিদ ব্যাপারী (৬৬), ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. চাঁদ আলী (৫২), ৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. আব্দুল লতিফ (৬২), ৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার মো. আব্দুল হাই (৬৫), ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. তোছাদ্দেক হোসেন নাসিম (৪৩), ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আফছার আলী (৬৮), ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আলাউদ্দীন (৩৩), ৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার মো. শরিফুল ইসলাম (৪৪), ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোছা. জীবন নাহার (৬০), ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার মোছা. বুলবুলি খাতুন (৫৫) ও ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোছা. হাসিনা খাতুন (৪৭।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, পাবনার সাঁথিয়া উপজেলাধীন সাঁথিয়া পৌরসভার অনুকূলে স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে ডেঙ্গু মশক নিধন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও প্রচার, কোভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস) মহামারি মোকাবিলার লক্ষ্যে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত ১৫ লাখ ৯০ হাজার ৪০০ টাকা, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত ১১ লাখ তিন হাজার ৮৬৭ টাকা, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত ১১ লাখ ২৫ হাজার ১৫০ টাকা সবার যোগসাজশে ভুয়া বিল-ভাউচার ও কোটেশন তৈরি করে আত্মসাত করা হয়েছে।
এছাড়াও আসামিরা পরস্পর যোগসাজশের মাধ্যমে সাঁথিয়া পৌরসভার কোনো জিপ গাড়ি না থাকা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত গাড়িতে জ্বালানি ব্যয়ের জন্য বিল উত্তোলন করে মোট ২ লাখ ১৫ হাজার ৯৬৬ টাকা ও সাঁথিয়া পৌরসভার ড্রেন পরিষ্কারের নামে ভুয়া বিল ভাউচার প্রস্তুত করে ২ লাখ ৭২ হাজার ১৫০ টাকা আত্মসাত করেছেন। সর্বমোট ৪৩ লাখ ৭ হাজার ৫৩৩ টাকা পরস্পর যোগসাজশে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে ভুয়া বিল-ভাউচার ও কোটেশন তৈরি করে বিল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা নথিভুক্ত করা হয়।
দুদকের পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে পৌরসভার বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ ঠিকমতো হয়েছে কিনা অনুসন্ধান করা হয়। করোনা ভাইরাস মোকাবিলার টাকা মানুষের জন্য খরচ না করে নিজেরা ভুয়া ভাউচার করে আত্মসাৎ করেছেন আসামিরা। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর মামলা করা হয়েছে। তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
0 মন্তব্যসমূহ