মাসুদ রানা: চাকরির পাশাপাশি পতিত জমিতে মাটর ডিপ পদ্ধতিতে লাউ চাষ করে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন আটঘরিয়া উপজেলার শ্রীকান্তপুর গ্রামের মোঃ হাফিজুর রহমান।
বর্ষা মৌসুমে লাউসহ বিভিন্ন সবজির চাহিদা বেশি থাকে। আর বছরে চার মাস পানির নিচে থাকা পতিত জমিতে মাটির ডিপ পদ্ধতিতে লাউ চাষ করে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দার উন্মোচিত হবে বলে আশা করছেন শিক্ষক হাফিজুর। তিনি শ্রীকান্তপুর মহিলা দাখিল মাদরাসার আইসিটি শিক্ষক।
তিনি পরিতাক্ত ১ বিঘা জমিতে এবার মাটির ডিপ পদ্ধতিতে লাউ চাষ করেছেন। সেখানে পানির ওপরে এখন বাঁশের মাচায় ঝুলছে শত শত লাউ। কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ছাড়াই শুধু জৈব সার ব্যবহার করে সবজি উৎপাদন করছেন তিনি।
অন্য জমির তুলনায় বিষমুক্ত এই সবজির ফলনও হয়েছে দ্বিগুণ। সমন্বিত চাষে কম খরচে বেশি লাভ হওয়ার আশায় খুশি এ কৃষক পরিবার।
এই পদ্ধতিতে লাউ ও সবজি চাষে পরিচর্যা ছাড়া তেমন পরিশ্রম নেই। ১ বিঘা জমিতে লাউ চাষে ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হলেও প্রায় ৬০-৭০ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন হাফিজুর।
কৃষক হাফিজুর বলেন, আমি ইউটিউব দেখে এই মাটির ডিপ তৈরি করে লাউ চাষ করার পদ্ধতি শিখেছি।
তাই এখানের হাজার হাজার একর জমি পতিত থেকে যায়। এ নিয়ে আমার মাথায় চিন্তা আসে যে কীভাবে এই জমিটা কাজে লাগানো যায়। এরপর আমি ইউটিউবে এ বিষয়ে সার্চ দিলে দেখি যে এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে লাভবান হওয়া যায়।
তিনি বলেন, ইউটিউবে দেখে আমি মাটির ডিপ মধ্যে তৈরি করে লাউয়ের চারা রোপণ করি। তারপর সেখানে মাচা দেই। বর্তমানে আমি মোটামুটি প্রায় ১ বিঘা জমিতে লাউ চাষ করেছি।
তাতে আমার খরচ হয়েছে ২৫-৩০ হাজার টাকার মতো। আশা করছি যে ফলন আসবে তা ১ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবো।
হাফিজুর আরও বলেন, এবার পরীক্ষামূলক ভাবে এ পদ্ধতিতে চাষ করেছি। ফলনও ভালো এসেছে এবং গাছের কোনো ধরনের নষ্ট হওয়া বা পানির জন্য গাছ মরে যায় এমন কিছু হয়নি।
সে জন্য আমি আশাবাদী যে সামনে আরোও বেশি করে আমি এই পদ্ধতিতে লাউ চাষ করব। আমার এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও আমার এখানে এই পদ্ধতি দেখতে ভিড় করছেন।
তারাও এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে আগ্রহী। আমি আশাবাদী যে এই লাউ চাষ করে আমি একদিন কোটিপতি হতে পারব।
লাউ খেত দেখতে আসা সেলিম, মিলন,রশিদ সাবিদুল,রাজ্জাক সহ অনেকেই বলেন, হাফিজ ভাই যে পতিতে চাষ করেছেন সেটি দেখে আমিসহ আমাদের এলাকায় অন্যান্য কৃষকরা আনন্দিত।
আমাদের যে জমিগুলো এতদিন পড়ে ছিল, সেগুলোতে আমরা এখন চাষ করতে পারব। এর মাধ্যমে আমাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পারবো বলে আশা করছেন তারা।
কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সজীব আল মারুফ বলেন, আটঘরিয়া উপজেলায় এই পদ্ধতিতে লাউ চাষ নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ।
তিনি আরও বলেন, কৃষি বিভাগ তাকে সব সময় সঠিক পরামর্শ দেবে। আরও অনেক কৃষক যাতে এ পদ্ধতিতে সবজি চাষে আগ্রহী হন সে বিষয়েও কাজ করা হবে।
আটঘরিয়ায় রোপা আমন ধানের চারা রোপণে ব্যাস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা
মাসুদ রানা: আটঘরিয়া উপজেলার কৃষকরা রোপা আমন ধানের চারা রোপণ শুরু করেছে। খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত আটঘরিয়া উপজেলার জমিতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কৃষকদের।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়,এ উপজেলায় চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮০৯০ হেক্টর,হাইব্রিড ১২৩৩ হেক্টর এবং উচ্চফলনশীল ৬৮২৪হেক্টর,স্থানীয় ৩৩হেক্টর।
ভাদ্র মাসের প্রথম পর্যায়েও আশানরুপ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় রোপা আমন চাষে কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ। কারণ রোপা আমন ধানের চারার বয়স বেশি হলে সেই চারা রোপণে ভালো ফলন পাওয়া যায় না।
সময় মতো আমন ধানের চারা রোপণ করার স্বার্থে বৃষ্টির পানি না থাকলেও গভীর নলকূপের সাহায্যে সেচ প্রদানের মাধ্যমে রোপা আমন ধানের চারা রোপণ করছেন কৃষকরা।
জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে টুকটাক চারা রোপণ শুরু হলেও আগষ্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে জেলার কৃষকরা আমনের চারা রোপণ কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে ৭৫০ হেক্টর জমিতে চারা রোপণ সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানাগেছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমে রোপা আমন চাষ সফল করতে এবার ৩ হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এবার বোরো’র বাম্পার ফলনের পরে জেলার কৃষকরা বর্তমানে রোপা আমন ধানের চারা রোপণে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে মাঠে নেমেছে।
কৃষক জেলানির ১বিঘা, নুরুল ইসলাম ২ বিঘা,রবিউল ২ বিঘা, আক্কেল ২ বিঘা, জুলফিকার হায়দার রাঙা ১৮ বিঘা, আবুল হাসেম ২ বিঘা, আমিনউদ্দীন ১ বিঘা, আব্দুস সালাম ১ বিঘাসহ অনেকেই এবছর আমন ধানের চাষ করেছেন।
কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ঠিক সময় বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের চারা রোপন করতে এবার পিছিয়ে পরেছি।
কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, সেচের পানি দিয়ে ধান লাগালাম। কিন্তু এতে অনেক খরচ হবে এবার।
আমিনউদ্দীন বলেন, সেচের পানি দিয়ে ধান লাগিয়েছি। ফলন এবং দাম ভালো পেলেই আমি খুশি।
জেলানি বলেন, একদিকে পাট কাটা, ধোয়া, শুকানো এবং অপরদিকে ধান লাগাতে আমাদের শ্রমিক সংকটে পরতে হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সজিব আল মারুফ বলেন, রোপা আমন ধান এর আধুনিক প্রযুক্তি বিস্তারে উপজেলা কৃষি অফিস কাজ করে যাচ্ছে।
পুরাতন জাতের পরিবর্তন করে স্বল্প জীবনকালের উচ্চ ফলন শীল জাত সম্প্রসারণের জন্য মৌসুমের শুরুতেই কৃষক দের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ