আসসালামুয়ালাইকুম, রামজানুল মুবারক।
প্রতি বৎসরের ন্যায় এবার ও রমজান সমাগত। কিন্তু বৈশ্বিক করোনা মহামারীর ও লক ডাউনের কারণে অধিকাংশ ডায়াবেটিক রোগীই ডাক্তারের চেম্বারে বা হাসপাতালে পরামর্শ নিতে আসত পারেন নাই।
তাছাড়া এইমাসে সবাই ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে চান। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে রোজা রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
এই বছর রোজা বেশ গরমে এবং প্রায় ১৩-১৪ ঘন্টা না খেয়ে থাকতে হবে। লম্বা দিন, ঘুমের ঘাটতি আর শারীরিক ক্লান্তির জন্য কিছু রোগী রোজায় অসুস্থ হয়ে যান। এজন্যই চিকিৎসক এর শরনাপন্ন হয়ে তার ঔষধ ঠিক করে নেয়া, যেনো পুরো ১ মাস জুড়ে তিনি সুস্থ দেহে রোজা রাখতে পারেন।
কারা রোজা রাখতে পারবেন না-
নিম্নলিখিত রা ছাড়া বাকী সব ডায়াবেটিস রোগীরা রোজা রাখতে পারবেনঃ
★যারা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া বুঝতে পারেনা।
★যারা ডায়াবেটিস জনিত দীর্ঘমেয়াদি কিডনি সমস্যায় ভুগছে।
★যারা ডায়াবেটিস জনিত খুব বেশি চোখের সমস্যায় (রেটিনোপ্যাথি) ভুগছেন,
★যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই।
★যাদের ডায়াবেটিস জনিত হৃদরোগ, স্ট্রোক রয়েছে।
★যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য দিনে কয়েকবার ইনসুলিন নিতে হয়,
★লাস্ট ৩ মাসের ভেতর ডায়াবেটিস রোগীর গ্লুকোজ বেড়ে প্রানঘাতী সমস্যাঃ কিটোএসিডোসিস হলে
★গর্ভবতী মহিলা
★যেসব মায়েরা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান।
★অসুস্থ বয়স্ক ব্যাক্তি।
রোজার সময় কি রক্তের সুগার টেস্ট করা যায়?
ইসলামি চিন্তাবিদ দের মতে, রোজার সময় ব্লাড সুগার টেস্ট করলে রোজা ভংগ হয়না।
প্রতিটি ডায়াবেটিস রোগীর উচিৎ নিজের কাছে একটি গ্লুকোমিটার কিনে রাখা।
ইফতারের আগে ও ২ ঘন্টা পরে, সেহরির আগে ও ২ ঘন্টা পরে এবং দুপুর ১২ টা থেকে ৩ টার ভেতর ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা উচিত।
কখন রোজা ভেঙে ফেলতে হবে?
রোজা থাকা অবস্থায় ব্লাড সুগার ৩.৯ এর নীচে নেমে গেলে কোন লক্ষন প্রকাশ না পেলেও রোজা ভেঙে ফেলতে হবে। এই অবস্থাকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলে।লক্ষ্মণ গুলো হলো -
★মাথা ঘুরাবে,
★হাত পা কাপবে,
★বুক ধড়ফড় করবে,
★ঘাম হবে,
★চোখে ঝাপসা দেখবে,
★চিন্তা করতে সমস্যা হবে
★ এমনকি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
এক্ষেত্রে সাথে সাথে রোগীকে চিনি, মিস্টি খাওয়াতে হবে এবং পরদিন যাতে এমন না হয় তাই ওষুধ বা ইনসুলিনের মাত্রা আরো কমাতে হবে।
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ১৬ এর চেয়ে বেশি হলে-
★মাথা ঘুরাবে,
★ঘন ঘন প্রস্রাব হবে,
★গলা,মুখ শুকিয়ে যাবে,
★পানিশূন্যতা,
★বমি,
★দুর্বলতা,
★ঝিমুনি লাগবে।
★★★মনে রাখতে হবে, হাইপোগ্লাইসেমিয়া একটি মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি। তাই ডায়াবেটিস রোগীর এই অবস্থা হলে তাকে হাসপাতালে নিতে হবে, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
রোযায় কেমন খাবার হওয়া উচিৎ?
মনে রাখতে হবে, রোজায়-
★ইফতারে খাবারের পরিমান হবে অন্য সময়ের রাতের খাবারের সমান।
★সন্ধ্যা রাতের খাবারের পরিমান হবে অন্য সময়ের সকালের খাবারের সমান।
★সেহরিতে খাবারের পরিমান হবে অন্য সময়ের দুপুরের খাবারের সমান।
★★সেহরি খাওয়া বাদ দেয়াই যাবেনা এবং সেহেরি খেতে হবে শেষ সময়ের কিছুসময় আগে।
★★এমন খাবার খেতে হবে, যেনো হজম ধীরে ধীরে হয়, যেমনঃ আঁশযুক্ত খাবার।
★★ইফতারে ১ টার বেশি খেজুর খাওয়া যাবেনা।
★★চিনি,গুড় দিয়ে তৈরী শরবত না খেয়ে ঘরে তৈরী ফলের জুস খেতে হবে।
★★রাতে প্রচুর পানি খেতে হবে।
★★তেলে ভাজা খাবার বাদ দিয়ে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
রোজায় শরীরচর্চাঃ
রোজায় আলাদা করে শরীরচর্চার প্রয়োজন নেই, তখন নিয়মিত নামাজের সাথে তারাহবীর নামাজের মাধ্যমেই শারীরিক পরিশ্রম হয়ে যায়।
রোজায় ঔষধ এবং ইনসুলিনের ব্যাবহারঃ
রোজার আগে যেই ঔষধ চলছিল তা সমন্বয় করে নিতে হবে।
*যারা একবেলা ঔষধ (Amaryl, Diaryl, secrin, Diamicron, comprid) খান তারা সেটা ইফতারের সময় খাবেন।
*Ripaglinide (Nomopil) জাতীয় ঔষধ খান তারা সকালের ডোজ ইফতারে, দুপুরের ডোজ বাদ দিয়ে রাতের ডোজ অর্ধেক পরিমাণে সেহেরিতে খাবেন।
যারা দুই বেলা ঔষধ খান তারা সকালের ডোজ ইফতারে এবং রাতের ডোজ সেহেরিতে অর্ধেক খাবেন।
*যারা Metformin (Metsa, comet, Nobedit, informet প্রভৃতি) জাতীয় ঔষধ খান তারা একই ডোজে সকলের টা ইফতারে, রাতেরটা সেহেরিতে খাবেন।
*যারা Galvus, Galvusmet, Sitagil, Sitagil M, Glipita, GlipitaM, Linarol, Linarol M, Traneta, Traneta M ইত্যাদি একবেলা খান তারা ইফতারে এবং যারা দুই বেলা খান তারা সকালের টা ইফতারে এবং রাতের ডোজ সেহেরিতে (প্রয়োজনে অর্ধেক) খাবেন।
*যারা একবেলা ইনসুলিন (Tresiba, Lantus, Levemir, Abasaglar, প্রভৃতি) নেন তারা একই ডোজে রাত নয় টা বা দশ টায় নিবেন।
*যারা দুই বেলা(সকাল ও রাতে) ইনসুলিন (Mixtard30, Humulin70/30, Actrapid+Insulard, Humulin R+HumulinN প্রভূতি) নেন তারা সকলের ডোজ ইফতারের সময় এবং রাতে ডোজ অর্ধেক পরিমানে সেহেরিতে নিবেন।
*যারা তিন বেলা ইনসুলিন (Actrapid, HumulinR, NovoRapid, Humalog, Apidra প্রভৃতি) নেন তারা সকলের ডোজ ইফতারে দুপুরের ডোজ বাদ অথবা প্রয়োজন হলে খুব অল্প পরিমানে সন্ধ্যারাতে এবং রাতের ডোজ অর্ধেক পরিমাণে সেহেরিতে নিবেন।
*যারা চার বার ইনসুলিন (Apidra, Novorapid, Humalog ও Tresiba, Lantus, Levemir, Abasaglar,প্রভৃতি) তারা ইনসুলিন (Actrapid, HumulinR, NovoRapid, Humalog, Apidra প্রভৃতি) সকলের ডোজ ইফতারে দুপুরের ডোজ বাদ অথবা প্রয়োজন হলে খুব অল্প পরিমানে সন্ধ্যারাতে এবং রাতের ডোজ অর্ধেক পরিমাণে সেহেরিতে নিবেন। এবং ইনসুলিন (Tresiba, Lantus, Levemir, Abasaglar, প্রভৃতি) নেন তারা একই ডোজে রাত নয় টা বা দশ টায় নিবেন। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডাঃ মোঃ শাহীনুর রহমান
সহকারি রেজিস্ট্রার (ডায়বেটিস ও হরমোন)
পাবনা ডায়বেটিক হাসপাতাল
