সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

ঈশ্বরদীর ইউএনও এর ব্যবহারে ‘মুগ্ধ’ হতদরিদ্র মানুষ

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট পাবনা ( ঈশ্বরদী): ঘড়ির কাঁটায় ঠিক সাড়ে ছয়টা। ঈশ্বরদী পৌর এলাকার পশ্চিমটেংরী পিয়ারাখালীর মসজিদ মোড় মহল্লায় স্হানীয় কয়েকজন রিকশাচালকসহ হতদরিদ্র অসহায় দাড়িয়ে। পৌর সড়কের মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে করোনা ভাইরাস নিয়ে সচেতন করছেন ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)  শিহাব রায়হান।

হঠাৎ করে উপজেলা প্রশাসন এর গাড়ি দেখে সবাই রিকশাচালকসহ সকলে এদিকে ওদিকে ছুটোছুটি করছিলেন। চায়ের দোকানে বসে থাকা ষাটোর্ধ আব্দুর জলীল খালাসি, রিকশাচালক মোসলেম উদ্দিনসহ অনেকে। উপজেলা প্রশাসন এর সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে ভয়ে তিনি যেন থমকে দাঁড়িয়ে যেতে চাইলেন।



রোববার (২৯ মার্চ) সন্ধায় ঈশ্বরদী পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের পিয়ারাখালী মসজিদ মোড়ে এসে গাড়ি থেকে হঠাৎ ই নেমে পড়লেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিহাব রায়হান।  'দেশে করোনার সংক্রমণের বিস্তার নিয়ে সবাই শঙ্কিত, মাস্ক ছাড়া কেন বের হয়েছেন সবাই! মনে হচ্ছে যেন হাট বসেছে। সবাই নিজ নিজ বাড়িতে চলে যান।আপনাদের সকলের কাছে আমি করজোড়ে মিনতি করছি। তার নির্দেশে সবাই চলে যাওয়া শুরু করলেন। এরপর তিনি নিজেই   রিকশাচালক মোসলেম উদ্দিনের কাছে গিয়ে ডাকলেন, রিকশাচালকের হাতে ৫ কেজি চাউলের ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,এখন দয়া করে বাড়ি চলে যান। চায়ের দোকানের দিকে এগিয়ে এসে ষাটোর্ধ বয়সী আব্দুর জলিল খালাসীর হাতে একটি ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বললেন, এই ব্যাগে তেল,ডাউল,পেয়াজ, আলু সাবানসহ কিছু সামগ্রী আছে। ইউএনও শিহাব রায়হান এর এই শান্ত আচরনেই অসহায় দুুই বৃদ্ধ যেন মুগ্ধ হয়ে যায়। এসময় তিনি ডেকে ডেকে হতদরিদ্র দিনমজুর মকিক উদ্দিন প্রাং  রিকশা চালক সুমন আলী,মিলন হোসেনের মত অনেকেই কাউকে ৫ কেজি চাউল,কাওকে মসলা সামগ্রী তুলে দেন।

তার আগে রোববার (২৯ মার্চ) সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর এলাকার বিভিন্ন মহল্লায় ঘুরে ঘুরে প্রায় শতাধিক অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরন করেন। তার আগে গত ১৫ মার্চ থেকে করোনা পরিস্থিতি বিস্তার রোধে নিরলসভাবে মাঠে কাজ করছেন ঈশ্বরদী উপজেলা প্রশাসনের সদস্যরা।

রিকশা চালক সুমন আলী (২৮) তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, 'সারাদিন রিকশা চালিয়ে কম হলেও সাড়ে চারশো টাকা আয় করতাম আগে। করোনা ভাইরাসের জন্য সারাদিন ভাড়া মারতে পারিনি। মাত্র ৬০ টাকা ভাড়া মেরেছি। পুলিশ আজ সারাদিন রাস্তায় রিক্সার টায়ার এর পাম ছেড়ে দিয়েছে, চাঁকা লিক করে দিয়েছে। প্রথমে তো দেখে ভয়েই রিকশা রেখে পালিয়ে ছিলাম। টিএনও সাহেব এত শান্ত আর ভদ্র। এমনটা আগে কোনদিনই দেখিনি।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)  শিহাব রায়হান জানান,আমি তাদের দুঃখ ও সমস্যা বুঝতে পারছি।করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে ঈশ্বরদীতে  বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। রাস্তায় ঘুরে ঘরে এসব মানুষের পাশে দাড়িয়েছে উপজেলা প্রশাসন। হয়তো একদিন আয় না করলে তাদের হাড়িতে ভাত উঠবে না। আমরা সাধ্যমত সেই অসহায় মানুষদের সহযোগীতা করতে চাই পাশে থাকতে চাই।

ইউএনও শিহাব রায়হান আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকার থেকে ঈশ্বরদী উপজেলার পৌরসভা ৯টি ওয়ার্ড ও ৭টি ইউনিয়নে করোনা ভাইরাসজনিত সংকটের কারণে হতদরিদ্রদের সহায়তায় ২০ টন চাল উপজেলায় বরাদ্দ এসেছে। বরাদ্দকৃত এই চাল প্রথম ধাপে  সেগুলো লোক-সমাগম না করে দরিদ্রদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিচ্ছি করোনার কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতে কারা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছেন, তা স্থানীয় পৌর মেয়র, কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে নিরপেক্ষ তালিকা তৈরির মাধ্যমে চাল বিতারণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।  এছাড়াও ৫ কেজি চাউল ১লিটার সয়াবিন তেল,১ কেজি লবন, আধা কেজি মসুরের ডাল, কেজি পেয়াজ, ৩ কেজি আলু, ১ টি ডেটল সাবান দেয়া হচ্ছে।

সরকার ঘোষিত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটিতে হোম কোয়ারেন্টিন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করছি, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। পাশাপাশি হতদরিদ্র মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষকে মাস্ক বিতরণ করেছি, হাত ধোয়ার জন্য সাবান দিয়েছি। একইসঙ্গে রাস্তায় ও যানবাহনে জীবাণুনাশক ছিটিয়েছি। তবে কোনকিছু একা করা সম্ভব না,সকলের সহযোগীতা দরকার বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ