সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন বঞ্চিত পাবনা জেলার ১৯৭ তম জন্মদিন আজ


রনি ইমরানঃ আজ ১৬ অক্টোবর পাবনা জেলার ১৯৭ তম জন্মদিন। ১৭৯৩ সালে যখন চিরস্থায়ী বন্দবস্ত ব্যবস্থার প্রবর্তন হয় তখন দেশের আয়তন ও সীমারেখার পরিবর্তন ঘটে এবং রাজশাহীর অন্তর্ভুক্ত হয় পাবনা। ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৮৭১ পর্যন্ত বর্তমান কুষ্টিয়া জেলা কুমারখালী এবং খোকসা থানা পাবনা জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে পাংশাকে পাবনা থেকে আলাদা করে ফরিদপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ সময় কুমারখালী ছিল দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম সমৃদ্ধ শহর, কুমারখালী ছিল পাবনা জেলার একটি মহাকুমা। 

কিছু ইতিহাসবিদের মতে, পাবনা নামটি পদুম্বা থেকে এসেছে। কালক্রমে পদুম্বা শব্দটির স্বরসঙ্গতি হয়ে পাবনা হয়েছে। পাবনা নামকরণ নিয়ে কারও মতে, পাবন বা পাবনা নামে একজন দস্যুর আড্ডাস্থল থেকেই একসময় পাবনা নামের উদ্ভব হয়। এছাড়া ও গঙ্গার পাবনী নামের একটি নদীর মিলিত স্রোতধারার নামানুসারে পাবনা নামের উৎপত্তি হয়েছে বলেও অনেকে মনে করেন। ১৮৭৮ সালের ১৯ জানুয়ারি জেলায় প্রথম রেলপথ স্থাপিত হয়। প্রথম মোটর সার্ভিসের প্রবর্তন করা হয় ১৯২৬ সালে। 

২০০৮ সাল থেকে পাবনা জেলার জন্মদিন পালনের সূচনা করেন ক্রিয়েটিভ আলোকচিত্র শিল্পী ও জাসাস পাবনা জেলা শাখার আহ্বায়ক খালেদ হোসেন পরাগ। সেই থেকে পাবনা জেলার জন্মদিন বা প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী বিভিন্ন আয়োজনে পালিত হচ্ছে পাবনায়। নদী মাতৃক দেশে পদ্মা যমুনা ইছামতি আত্রাই বড়াল কাগেশ্বরী গুড়া গুমানি চিকনাইয়ের মত রূপবতী নদী পাবনা জেলায় প্রবাহিত হয়েছে। হোসিয়ারী শিল্প, তাঁত শিল্প, কাঁচি শিল্প, বেনারসি-কাতান সহ অন্যান্য শিল্প সমৃদ্ধ এই জেলা এক সময়ে ছিল দেশের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র। পাবনার বর্তমান জেলা প্রশাসক মো. মফিজুল ইসলাম। ২৩৭১.৫০ বর্গকিমি আয়তন বিশিষ্ট পাবনা জেলায় ৯ টি উপজেলা ও ৭৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। পাবনায় আদমশুমারি অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা ২৯,০৯,৬২৪ জন। 

ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতিতে পাবনা জেলার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন ভাষা সংগ্রাম আর সুমহান স্বাধীনতা সংগ্রামে এই জেলার মানুষদের বীরত্বপূর্ণ অবদান ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। বিশ্ব বরেণ্য কবি-সাহিত্যিক, রাজনীতিক সাংবাদিক, শিল্প উদ্যোক্তা, বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, বিজ্ঞানী, অভিনেতা-অভিনেত্রী পাবনা তথা গোটা দেশকে বিশ্ব দরবারে স্বগৌরবে তুলে ধরেছে। বৃটিশ স্থাপত্যের টেকসই নিদর্শন দেশের একমাত্র বৃহত্তর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ রেল সেতু, লালন শাহ সেতু ও দেশের একমাত্র পারমাণবিক প্লান্ট পাবনায় অবস্থিত। 

পাবনায় রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব দর্শনীয় স্থান । পাবনার হেমায়েতপুরে রয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র মানসিক হাসপাতাল, সনাতন ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান শ্রী শ্রী অনুকুল ঠাকুরের জন্মভুমি । 

পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার বলেন,  দেশের প্রাচীনতম পাবনা জেলার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি আজও।  আগামীতে দুইশত বছর পূর্তিতে আমরা চাই পাবনার মানুষের প্রাণের দাবিগুলো বাস্তবায়ন হোক। আমরা পাবনা থেকে সরাসরি ট্রেনে ঢাকা যেতে চাই। শহরের প্রধান সড়ক যানজট মুক্ত চাই।  জেলার মানুষের কাঙ্ক্ষিত দাবি চাই বাস্তবায়ন। 

পাবনা শহরের বাসিন্দা ডাঃ রাম দুলাল ভৌমিক বলেন, পাবনা শহরের রাস্তা ঘাটের বেহাল দশা। অসহনীয় যানজটে থমকে থাকে শহর। শহরের রাস্তা প্রশস্ত করে যানজট নিরসন আশার বাণীতে আটকে রয়েছে। জনভোগান্তিকর এসব সমস্যার দ্রুত নিরসন চাই। ঢাকা পাবনা সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ, ইছামতী খনন,  বিনোদন পার্ক নির্মান, পাবনা পৌরসভাকে সিটি কপোরেশনে উন্নীত করার দাবি এবং দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে পাবনা জেলার সংযুক্তি সহ বেশ কয়েকটি দাবি পাবনার জনমানুষের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে। 

বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত পাবনা শহরের পেটের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা এক সময়ের স্রোতস্বিনী ইছামতি নদীর শহর অংশের খনন কাজে বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিনের দেখা স্বপ্ন বাস্তবায়নে কালো হতাশা ভর করেছে। এসব প্রাণের দাবি গুলো বাস্তবায়নে অপেক্ষার পাবনাবাসী আশায় বুক বেঁধে রয়েছে।  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ