এবিএম ফজলুর রহমান, পাবনা : দুর্গাপূজা শেষ হয়েছে ২০ দিন তবে এখনও পাবনার ফরিদপুরে চলছে অবৈধ লটারি। প্রশাসনের নীরবতা, পুরস্কারের প্রলোভনে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর দুই তারিখে দুর্গাপূজা উপলক্ষে পাবনার ফরিদপুর উপজেলার থানাপাড়া খেলার মাঠে এন.এস ক্লাবের আয়োজনে “লটারি–২০২৫” নামে একটি বড় আয়োজন করে। এ উপলক্ষে টিকিট বিক্রি থেকে শুরু করে পুরস্কার ঘোষণায় চলছে ব্যাপক প্রচার। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই এই লটারিটি পরিচালিত হচ্ছে যা লটারি আইন ২০১২-এর ধারা ৫ ও ৬ অনুযায়ী অবৈধ। প্রতি টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে ২০ টাকা। আয়োজকরা মোট ১৫১টি পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন এর মধ্যে রয়েছে মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, সেলাই মেশিনসহ নানা আকর্ষণীয় সামগ্রী। টিকিটে উল্লেখ ছিল যে ড্র অনুষ্ঠিত হবে ১৬ অক্টোবর, তবে পরবর্তীতে তা পিছিয়ে ২০ অক্টোবর করা হয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, পুরস্কারের আশায় অনেকে ধার–দেনা করে লটারি কিনেছেন। কেউ গরু বিক্রি করে, কেউ বেতন আগাম তুলে একাধিক টিকিট কিনেছেন ভাগ্য ফেরানোর আশায়। কিন্তু সময়মতো ড্র না হওয়া ও আয়োজনের অস্বচ্ছতায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসন জানার পরও এমন অবৈধ আয়োজনের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ফরিদপুর পৌর এলাকার মুদি দোকানি রাসেল আহমেদ বলেন, প্রতি বছরই এমন লটারি হয়, কেউ পুরস্কার পায় না, অথচ আয়োজকরা লাখ লাখ টাকা তুলে নেয়।
আরো একজন ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী বলেন, প্রশাসন চোখ বন্ধ করে রেখেছে। টাকার খেলা চলছে, আর সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
স্থানীয় শিক্ষক আব্দুল হামিদ বলেন, এই লটারি মানুষকে সহজে অর্থ পাওয়ার স্বপ্ন দেখায়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটা সমাজে জুয়ার মানসিকতা বাড়াচ্ছে।
সচেতন মহলের মতে, সরকার অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লটারি পরিচালনা করতে পারে না। এটি জুয়া আইনের আওতায়ও অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। ২০১২ সালের লটারি আইনের ৫ ও ৬ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি অনুমতি ছাড়া লটারি আয়োজন করলে আয়োজক ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে জরিমানা ও কারাদণ্ডযোগ্য অপরাধ প্রযোজ্য। এই ধরনের অনুমোদনহীন লটারি শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, বরং সমাজে প্রতারণা ও অবৈধ উপার্জনের সংস্কৃতি গড়ে তুলছে। তাদের দাবি, প্রশাসনকে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এভাবে সাধারণ মানুষের শ্রমের অর্থ নিয়ে খেলা করতে না পারে।
এ বিষয়ে এন.এস ক্লাবের লটারি কমিটির সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুব হাসান বলেন, লটারির বিষয়টি তদন্তের জন্য ফরিদপুর থানার অফিসার ইনচার্জকে জানানো হয়েছে।
ফরিদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাকিউল আজম জানান, পূজার আগে আয়োজকরা অনুমতি চেয়েছিল, কিন্তু আমরা অনুমতি দিইনি। যদি তারা অনুমতি ছাড়া লটারি পরিচালনা করে থাকে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

0 মন্তব্যসমূহ