পাবনা সদরের চরতারাপুর ইউনিয়নের বাহিরচর গ্রামের রাব্বি হোসাইন এবার সাত বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। হালের গরু, ছাগল, অন্যান্য ফসল ও কিছু জিনিস বিক্রির পুরো টাকা লগ্নি করেছেন আবাদে। কিন্তু রোপণ মৌসুমে অতিবৃষ্টির ফলে পচে যায় প্রথম দফায় লাগানো পেঁয়াজ। দ্বিতীয় দফায় রোপণ ও পরিচর্যার জন্য প্রায় ৫ লাখ টাকা ঋণ নিতে হয় তাঁকে। শর্ত ছিল, পেঁয়াজ উঠলে ফেরত দেবেন টাকা। কিন্তু বাজারে পেঁয়াজের যে দাম চলছে, তাতে উৎপাদন খরচই উঠবে না। এ অবস্থায় দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন এই কৃষক।
রাব্বি বলেন, ‘শুরুতে ৫-৬ হাজার টাকা মণ দরে বীজ কিনে মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ করেছিলাম। বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় ৭ থেকে ৯ হাজার টাকা মণ দরে বীজ কিনতে হয়েছে। সব মিলিয়ে পুরো আবাদে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকার ওপরে। সেখানে যা ফলন হয়েছে তাতে ৭০-৮০ হাজার টাকার বেশি উঠবে না। এত টাকা ঋণ পরিশোধ করব কীভাবে!’
শুধু রাব্বি নন, মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ করে এবার একই বিপদে পড়েছেন রাজশাহী বিভাগের কয়েক জেলার কৃষক। তারা বলছেন, আবাদে মণপ্রতি ২ হাজার টাকার ওপর খরচ হলেও, বর্তমান বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে। গত মৌসুমের মতো বিঘাপ্রতি ফলন ৬০-৭০ মণ প্রত্যাশা করলেও, এবার গড় ফলন হয়েছে ৩৫-৪০ মণ। সব মিলিয়ে ফলন বিপর্যয় ও কম দামে ব্যাপক লোকসানে পড়েছেন কৃষকরা। এমন দর পতনের জন্য ভরা মৌসুমে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে দুষছেন কৃষকরা। দ্রুত আমদানি বন্ধ করে পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের দাবি তাদের।
লোকসান এড়াতে জমি থেকে এখন সব পেঁয়াজ না তোলার পাশাপাশি কৃষকদের অল্প অল্প করে বাজারে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জামাল উদ্দিন বলেন, কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে আমরা বাজারে ঘুরে ব্যবসায়ীদের কারসাজি না করতে অনুরোধ জানাচ্ছি। আমদানি বন্ধের বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত প্রস্তাবনা পাঠানো হচ্ছে।

0 মন্তব্যসমূহ