রনি ইমরান, পাবনাঃ পৌষের গোধূলি বেলাতে যেন সৌন্দর্যের আগুন লেগেছে প্রকৃতিতে। যেদিক চোখ যায় প্রকৃতি সেজেছে শুধু হলুদে হলুদে। সরিষার হলুদ ফুলে ফুলে ভরে গেছে পাবনার বিস্তীর্ণ মাঠ প্রান্তর।নয়নাভিরাম ক্ষেতে ফুলের ঘ্রাণে মাতোয়ারা হয়ে উড়ছে মৌমাছি।
জেলার পদ্মা যমুনার তীরবর্তী বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে কৃষকের মাঝে সরিষা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। দেশের মোট সরিষার চাহিদার এক-চতুর্থাংশ উৎপাদিত হয় পাবনায়। গত বছরের তুলনায় এ বছর পাবনায় সরিষা চাষ বেড়েছে। জেলার মোট ৯টি উপজেলায় কৃষকরা ব্যাপকভাবে সরিষার চাষ করেছেন। এবার ভালো লাভের আশা করছেন তারা।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী চলতি মৌসুমে ৪৫ হাজার ৪৩ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৬৬ হাজার টন ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন কৃষি কর্মকর্তারা। তারা জানায় বেশিরভাগ কৃষককে ১ কেজি সরিষা বীজ ১০ কেজি ডিএপি সার এবং ১০ কেজি এমওপি সার প্রণোদনা হিসেবে দেয়া হয়েছে।এছাড়াও কৃষককে ১ কেজি সরিষা বীজ দেয়া হয়েছে।
পাবনার সদর উপজেলার হেমায়েতপুরের কৃষক মো: হাবীব বলেন আমি এই মৌসুমে প্রায় ৫ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। আশা করি বিঘা প্রতি ২০ হাজার টাকা আয় করব।
পাবনা সদর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশিকুর রহমান বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর সরিষা চাষ বেড়েছে। সরিষা ক্ষেত এখন পূর্ণ ফুলেছে।কৃষকদের নিয়মিত ফলন বৃদ্ধি এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ নিয়ন্ত্রণের নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপ পরিচালক ডঃ জামাল উদ্দিন বলেন, বিদেশ থেকে আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে ভোজ্য তেল আমদানি করা হয়। এই আমদানি নির্ভরতা কমাতে কৃষকদের সরিষা চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
পাবনা জেলার মধ্যে দিয়ে পদ্মা যমুনাসহ অনেক নদী প্রবাহিত হয়েছে। নদী তীরবর্তী অঞ্চলে সরিষার আবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব অঞ্চলে যেমন সরিষার আবাদ বেশি হয় তেমনি ফলনও হয় আশানুরুপ। বিপুল পরিমান সরিষা এখানে উৎপাদন হয় এবং দেশে সরিষার তেলের চাহিদা পূরণ করে। বেশি লাভের কারনে সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা।
এছাড়া মাঠগুলোতে যখন সরিষা ফুলে ভরে থাকে তখন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মৌচাষিরা আসেন মধু আহরণ করতে।
কৃষকরা জানান অন্যান্য ফসল আবাদ করে যে পরিমাণ লাভ করা যায় তার চেয়ে একই পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ করে দ্বিগুণ লাভ করা যায়। সরিষা চাষ যেমন দেয় তেল সাথে দেয় মধু।

0 মন্তব্যসমূহ