তারেক খান, পাবনা : শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি মণ্ডিত ঐতিহ্যবাহী জেলা পাবনা। এ জেলায় বারিন মজুমদার, গৌরী প্রসন্ন মজুমদার, বাঁশরী লাহিড়ী, সুচিত্রা সেন, কবি বন্দে আলী মিয়া সহ সংস্কৃতি অঙ্গনে অসংখ্য গুনী মানুষ জন্মগ্রহণ করেছেন। যাদের শিল্পকর্ম আজও দেশ ও দেশের বাহিরে গর্বের সাথে পাবনার ঐতিহ্য বহন করছে। সম্প্রতি পাবনায় উদ্যোক্তা মেলার একটা ট্রেন্ড চালু হয়েছে।
যা দু-এক মাস পরপরই পাবনার ঐতিহ্যবাহী বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। আর এসব মেলা থেকে মেলা কমিটি লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করছে। অথচ মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বেহাল দশা। বিশেষ করে সঙ্গীত অঙ্গনে। প্রতিনিয়ত অপ্রশিক্ষিত বেসুরো কারাওকে গায়কদের দিয়ে স্বাধীনতা চত্বরের মুক্তমঞ্চে গান গাওয়ানো হচ্ছে। যাদের গানের সুর তাল লিরিক সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। অথচ একসময় এই মঞ্চে উঠে বড় বড় গায়কদের গান গাইতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অনেক সাধনা করতে হতো। বর্তমানে কিছু অসচেতন স্বার্থান্বেষী ব্যবসায়ীদের কারনে পাবনার মুক্তমঞ্চ কলুষিত হচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য একটাই যেকোনো উপায়ে টাকা কামানো।
আর যদি সেটা হয় বিনামূল্যে দর্শক মাতিয়ে তাহলেতো কথাই নেই। গোল্লায় যাক পাবনার সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য। ডোন্ট কেয়ার এমন একটা ভাব তাদের মধ্যে। কেননা কারাওকে দিয়ে গান গাওয়ার জন্য কোনো বাদ্যযন্ত্র, বাদক বা কোন প্রশিক্ষিত গায়কও লাগেনা। কেবল অনলাইন থেকে মিউজিক ডাউনলোড করে স্টেজে অন করে মাইক্রোফোনে অটো টিউন সেট করে দিলেই গান গাওয়া যায়। আর সাধারণ দর্শক-শ্রোতাদের গানের সুর তাল সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার কারনে তারা ওটাই গ্রহন করছে। তারা ভাবছে এত বড় মঞ্চে যখন কোন গায়ক গান করছে নিশ্চয় সে একজন ভালো শিল্পী। তাই ওটা নিয়েই দর্শক-শ্রোতারা আনন্দে মেতে উঠছে। ফলে পাবনার ভবিষ্যতে প্রজন্ম একটা অপ্রশিক্ষিত বেসুরো গায়কদের সাথে বেড়ে উঠছে।
যা পাবনার সংগীত অঙ্গনের জন্য অত্যন্ত হুমকি স্বরূপ। তাছাড়া এসব অপ্রশিক্ষিত বেসুরো কারাওকে গায়কদের কারণে পাবনার প্রশিক্ষিত সঙ্গীত শিল্পী ও শিল্পী গোষ্ঠীরা মঞ্চে ওঠার কোনো সুযোগ পাচ্ছে না। বিশেষ করে পাবনার অনেক স্বনামধন্য ঐতিহ্যবাহী ব্যান্ড দল আছে যারা পাবনার দর্শক-শ্রোতাদের যুগের পর যুগ মানসম্মত শ্রুতিমধুর গান শুনিয়ে দর্শক মাতিয়ে আসছে। শুধুমাত্র বাদ্যযন্ত্র ভাড়ার টাকা বাঁচানোর জন্য অধিকাংশ মেলা কমিটি প্রতিনিয়ত এধরণের অপসংস্কৃতি মূলক আচরণ করে আসছে। পাবনায় এসব মেলা কমিটি এক একটা মেলা থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা কামিয়ে নিচ্ছে অথচ সংগীত অঙ্গন প্রতিনিয়ত অবহেলিত হচ্ছে এমনটাই বলছেন পাবনার সুশীল সমাজ।
এ বিষয়ে পাবনার স্বনামধন্য গায়ক আর টিভি ইয়াং স্টার টপ টেনের মাহাদী হাসান বলেন, পাবনা টাউন হল মুক্তমঞ্চের একটা ঐতিহ্য আছে। যার সাথে পাবনার সংস্কৃতির ভাবমূর্তি ওতপ্রতভাবে জড়িত। সেখানে প্রশিক্ষিত সংগীত শিল্পীদের আমন্ত্রণ না জানিয়ে অপ্রশিক্ষিত বেসুরো কারাওকে গায়কদের দিয়ে গান গাওয়ানো অত্যন্ত নিন্দনীয়।
পাবনার এ-টিউন ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠতা লিটন জানান, পাবনায় আমাদের এ-টিউন ব্যান্ড সহ ভালো ভালো অনেক ব্যান্ড আছে যারা সবাই প্রশিক্ষিত সংগীত শিল্পী। অথচ পাবনায় বড় বড় উদ্যোক্ত মেলা হয় সেখানে গানের আয়োজন করা হয় আমাদের ডাকা হয় না। অপ্রশিক্ষিত বেসুরো কারাওকে গায়কদের দিয়ে গান গাওয়ানো হয়। কেননা কারাওকে দিয়ে গান গাইলে বাদ্যযন্ত্র, বাদক কিছুই লাগে না। মাইক্রোফোনে অটোটিউন সেট করে দিলেই গান গাওয়া যায়। মেলা কমিটিরও টাকা বেঁচে যায়। পাবনা মুক্তমঞ্চের একটা ঐতিহ্য আছে কিন্তু সেখানে প্রতিনিয়ত অশ্লীল নৃত্য আর বেসুরো কারাওকে গান পরিবেশন করিয়ে মঞ্চে দর্শক আকর্শন করা হচ্ছে যার তীব্র নিন্দা জানাই।
পাবনার সংগীত শিল্পী সুমন এ-টিউন ও নীরব বলেন, পাবনায় প্রতিনিয়ত মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। হাতে গোনা দুই একজনকে গায়ককে ছাড়া কাউকে আমন্ত্রণ করা হয় না। তাও হঠাৎ দুই এক দিন। অথচ মাইকে কারাওকে সেট করে অপ্রশিক্ষিত বেসুরো কারাওকে গায়কদের অটো টিউন দিয়ে গান গাওয়ানো হয়। কেননা তাদের বাদ্যযন্ত্র ভাড়ার টাকা দিতে হয় না। আর কারাওকে গায়করাও মঞ্চে ওঠার জন্য আজেবাজে গান গেয়ে মেলায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
[ নিউজ পাবনার ‘মুক্তমত’ কলামে প্রকাশিত সকল লেখা লেখকের একান্তই নিজস্ব মতামত। এর সাথে নিউজ পাবনার সম্পাদকীয় নীতিমালার মিল নাও থাকতে পারে ]

0 মন্তব্যসমূহ