সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

পাবনায় টুকুপুত্রের ২০০ কোটি টাকার বালু সাম্রাজ্য

 


পাবনার বেড়া পৌর এলাকার পায়না মহল্লায় হুরাসাগর নদের পাড়ে বেঁধে রাখা হয়েছে প্রায় ৩০টি বালু উত্তোলনের ড্রেজার। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন থেকে এক মাসের বেশি সময় ধরে সেগুলো ‘বেওয়ারিশ’ অবস্থায় সেখানে পড়ে আছে। অথচ সরকার পতনের আগের দিন পর্যন্ত ড্রেজারগুলো দিয়ে সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ছেলে আসিফ শামস রঞ্জনের নেতৃত্বে যমুনা ও হুরাসাগর নদ থেকে দিনরাত বালু তোলা হতো। 


স্থানীয়রা জানান, প্রকাশ্যে ড্রেজার লাগিয়ে অবৈধভাবে যমুনা নদীর পেঁচাকোলা থেকে শুরু করে হুরাসাগর নদের পাঁচ-ছয়টি পয়েন্ট থেকে বালু তোলা হতো। 


উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ যমুনাপাড়ের বিভিন্ন গ্রাম ভাঙনের ঝুঁকিতে ফেলে এভাবে কোটি কোটি টাকার বালু তোলা হলেও সরকারিভাবে ওই এলাকায় কোনো বালুমহালই নেই। বরং ভাঙন ঝুঁকির কারণে বালু তোলা নিষিদ্ধ। গত কয়েক বছর ধরে এই বালু উত্তোলনের একমাত্র হোতা ছিলেন শামসুল হক টুকুর ছেলে বেড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র আসিফ শামস রঞ্জন। ফলে সব জেনেও না দেখার ভান করত প্রশাসন। হাসিনা সরকারের পতনের পর আসিফ আত্মগোপন করেন। এরপর থেকে বন্ধ রয়েছে অবৈধ বালু উত্তোলন।


এলাকাবাসী জানান, টুকু পরিবার গত ১৬ বছরে অবৈধভাবে বালু তুলেই অন্তত ২০০ কোটি টাকা আয় করেছে। এখন ক্ষমতার পালাবদলে লোভনীয় এই বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে কয়েকটি চক্র। এ নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপের বিরোধে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সংঘর্ষের আশঙ্কায় সেনাবাহিনীর নজরদারি রয়েছে সেখানে। 


খোঁজ নিয়ে জানা যায়,  যমুনা নদী থেকে প্রায় ২৫ বছর ধরে বালু তোলা হচ্ছে। তবে গত তিন বছরের মতো যথেচ্ছভাবে বিপুল পরিমাণ বালু আগে কখনও তোলা হয়নি। ২০০৮ সালের পর বিভিন্ন এলাকায় টুকুর প্রশ্রয়ে তাঁর অনুসারীরা বালু তুলে বিক্রি করতেন। ২০২১ সালের প্রথম দিকে আসিফ বালু উত্তোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হন। এরপর একতরফা নির্বাচনে বেড়া পৌরসভার মেয়র হয়ে বালু উত্তোলনে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। স্থানীয় ছোট ড্রেজারের পাশাপাশি ভাড়া করে আনা কয়েকটি ভারী ড্রেজারের মাধ্যমে বালু তোলা হতো।  জানা গেছে, সরকারকে রাজস্ব দিতে হতো না বলে পুরো আয়ই যেত আসিফের পকেটে। 


সরেজমিন দেখা গেছে, অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রভাবে যমুনা পাড়ের নেওলাইপাড়া, নতুন বাটিয়াখড়া, চরনাগদাহ, হাটাইল-আড়ালিয়া, চরসাঁড়াসিয়া গ্রামসহ সাতটি গ্রামে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া পাউবোর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধও পড়েছে চরম ঝুঁকির মধ্যে।

পায়না মহল্লার মো. রাতুল ও কালু শেখ নামের  দু’জন ড্রেজার শ্রমিক জানান, এখানকার কয়েকটি মহল্লার প্রায় ৭০০ মানুষ বালু শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়া বালুবাহী ট্রাকেও কাজ করেন কয়েকশ শ্রমিক।  বালু তোলা বন্ধ থাকায় তারা এখন বেকার। 


সরেজমিন দেখা যায়, যমুনাপাড়ের পেঁচাকোলা, মোহনগঞ্জ এবং হুরাসাগর নদের পাড়ে থানাপাড়া (পোর্ট এলাকা হিসেবে পরিচিত), অধীননগরসহ কয়েকটি গ্রামের বিভিন্ন স্থানে বিশাল স্তূপ করে বালু রাখা আছে। এসব জায়গায় এখনও অন্তত ১০ কোটি টাকার বালু রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। 


পায়না মহল্লার বাসিন্দা ও সাবেক কাউন্সিলর এনামুল হক বলেন, আসিফ অনেক কৃষকের ফসলি জমি থেকেও জোর করে বালু তুলে কৃষিজমি নষ্ট করেছেন। আদালতে মামলাও হয়েছে। তা সত্ত্বেও তিনি থামেননি। 


এ ব্যাপারে পাউবোর বেড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, হুরাসাগর ও যমুনার নিষিদ্ধ পয়েন্টে বালু উত্তোলন বিপজ্জনক। এতে নদীভাঙনের পাশাপাশি বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর হওয়া প্রয়োজন।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোরশেদুল ইসলাম বলেন, বেড়া উপজেলায় কোনো বালুমহাল নেই। হুরাসাগর নদ ও যমুনার কিছু স্থানে সেনাবাহিনী ও বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং করছে। এর বাইরে ব্যক্তিগত পর্যায়ে বালু তোলার সুযোগ নেই। অবৈধভাবে কাউকে বালু তুলতে দেওয়া হবে না

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ