ছবিটি প্রতীকি |
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় সানজিদা শিফা (১৬) নামে একাদশ শ্রেণির এক কিশোরীর মৃত্যু ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রেমিক ও তার বন্ধুদের দ্বারা ধর্ষণের একদিন পর গত ১০ সেপ্টেম্বর বিকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার মৃত্যু হয়। এর পরে তড়িঘড়ি তার লাশ নিয়ে যায় তার পরিবার।
হাসপাতালের একটি সূত্র বলছে, মৃত কিশোরীর মৃত্যু বিষাক্ত কিছুর সেবনে হয়েছে। ওই দিন রাতেই তার মরদেহ তড়িঘড়ি দাফন করা হয়েছে। কিশোরীর পরিবার খুব দরিদ্র। ঘটনার বিচার চাইলে কবর থেকে লাশ তুলবে, তাই কোথাও বিচার চায় না শিফার বাবা শফিকুল ইসলাম।
শফিকুল উপজেলার চরভাঙ্গুড়া গ্রামের বাসিন্দা। এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর সে তার প্রেমিক নীরব এবং তার দুই বন্ধু রমজান ও মাহফুজের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়।
রহস্য খুঁজতে ঘটনাস্থল ও শিফার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার কৈডাঙ্গা গ্রামের সূর্য খানের ছেলে নীরব (২২) প্রেমের সম্পর্কে গড়ে তোলে শিফার সঙ্গে। প্রেমের আড়ালে কৌশলে শারীরিক সম্পর্কের একটি আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে রাখে নীরব। এই ভিডিও ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে তাকে দীর্ঘদিন ধরে ব্লাকমেইলে করে ধর্ষণ করে আসছিল সে। একইভাবে গত ৯ সেপ্টেম্বর তাকে উপজেলার কৈডাঙ্গা গ্রামে ডেকে নেয় নীরব। সেখানে একটি পরিত্যক্ত ঘরে নীরব তার বন্ধু রমজান ও মাহফুজুল মিলে তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় সে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে তাদের আটক করে রাখেন।
এর পর সেখান থেকে ওই কিশোরী রেললাইন ধরে হেঁটে ঘটনাস্থলের দেড় কিলোমিটার দূরে শরৎনগর স্টেশনে যায়। সেখানে সে ট্রেনের নিচে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এ সময় কিছু লোকজন তাকে থামিয়ে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে পৌঁছে দেন। তার শিক্ষকরা তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন।
গত ১০ সেপ্টেম্বর সে যথারীতি তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসে ক্লাশ করে বাড়িতে ফিরে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার পরিবার তাকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তার অবস্থার অবনতি হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে পাবনা মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরে পরামর্শ দেওয়া হয়। এর কিছু সময় পরই ওই কিশোরী মারা যায়। তাকে চিকিৎসা দেওয়া ডা. আসিফ প্রাথমিক উপসর্গ দেখে মৃত্যুটি অস্বাভাবিক মনে করায় ভাঙ্গুড়া থানাপুলিশে খবর দেন।
এলাকায় এ চক্রটি চিহ্নিত বখাটে ও মাদক কারবারি এবং পতিতা সরবরাহকারী হিসেবে পরিচিত। গত বছর এক কলেজছাত্রীর শ্লীলতাহানি চেষ্টা করে নীরব, শুভ ও তারেক পুলিশের হাতে আটক হয়ে জেলও খেটেছে। ওই সময় দৈনিক যুগান্তর ‘ঈদের দিন ছাত্রীকে একা পেয়ে নিপীড়ন, ৩ যুবক কারাগারে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। ওই কিশোরীর ধারণ করা ভিডিও এখন অনেকের কাছেই পৌঁছে গেছে। যার একটি রয়েছে যুগান্তরের কাছে।
পরে পুলিশ এসে মৃত কিশোরীর বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, শ্বাকষ্টজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ না থাকায় তারা পোস্টমর্টেম ছাড়াই মরদেহ তাদের নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়। ১০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাতেই তাকে দাফন করা হয়েছে।
শিফার বাবা শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমরা গরিব মানুষ আমাদের বিচার হবে না। তাই লাশ কাটতে (পোর্টমর্টেম) দেই নাই। পরে অভিযোগ দিলে আবার লাশ তুলবে, আমার সহ্য হবে না।
ভাঙ্গুড়া থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল করিম জানান, ওই মেয়ের মৃত্যু হাসপাতাল থেকে স্বাভাবিক বলা হয়েছিল। আর পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ