সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

পাবনায় পদ্মা-যমুনায় রেণু পোনা সংগ্রহের নামে মাছ নিধন

 

ফাইল ছবি

পাবনা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা, যমুনা নদীসহ বিভিন্ন জলাশয় থেকে অবৈধভাবে রেণু পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ ধরার মহোৎসব চলছে। এতে ধ্বংস হচ্ছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের অসংখ্য দেশি প্রজাতির মাছ।


মৎস্য আইনে অবৈধ রেণু পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ শিকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান থাকলেও স্থানীয় সংশ্লিষ্ট কার্যালয়গুলো এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বছরের পর বছর ধরে চলা এ নিধনযজ্ঞের কারণে নদী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। 


জানা গেছে, বৈশাখ থেকে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের মধ্যে নদনদীগুলোতে সাধারণত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ডিম ছাড়ে। সেগুলো সংগ্রহে নেমে পড়েন অবৈধ পোনা সংগ্রহকারীরা। তারা মশারির চেয়েও সূক্ষ্ম পাতন জাল, বেউচি জাল, সাবার জাল প্রভৃতি দিয়ে রেণু পোনা ও ডিম সংগ্রহ করে। পুকুরে চাষ উপযোগী রুই, কাতলা, মৃগেল প্রভৃতি মাছের রেণু পোনা ও ডিম সংগ্রহের উদ্দেশ্যে নদীতে জাল পাতা হলেও অবশিষ্ট থাকে না পোকামাকড়ও। এসব জালে নিধন হয় প্রায় সব ধরনের জলজ প্রাণী। প্রয়োজনীয় রেণুপোনা ও ডিম সংগ্রহ করার পর অন্য প্রাণগুলো অযত্ন ও অবহেলায় ডাঙায় পড়ে থাকে, মারা যায়। এভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য।


সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, যমুনা ও হুরাসাগরসহ বেশ কয়েকটি নদীর অসংখ্য স্থানে জাল পেতে রেণুপোনা ও ডিম সংগ্রহ চলছে। এ ছাড়া নদীর অনেক স্থানে বাঁশের বাঁধ তৈরি করে চলছে ডিমওয়ালা মাছ শিকার। 


নগরবাড়ী এলাকায় যমুনা নদীতে জাল পেতে রেণুপোনা ও ডিম সংগ্রহের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন জানান, কয়েক বছর ধরে তারা এভাবে রেণু পোনা ও ডিম সংগ্রহ করে মাছ চাষিদের কাছে বিক্রি করছেন। এভাবে সংগ্রহের সময় বিভিন্ন প্রজাতির পোনা ও ডিম জালে ধরা পড়লেও তারা রুই, কাতলা, মৃগেলসহ কয়েকটি প্রজাতির পোনা-ডিম রেখে বাকিগুলো ফেলে দেন। বেলে, টেংরা, পুঁটি, বোয়াল, বাউশ, পাবদা, বাটকাসহ অসংখ্য মাছের রেণু পোনা ও ডিম জালে আটকা পড়লেও চাষের অযোগ্য বলে সেসব ফেলে দেওয়া হয়। তবে এ ব্যাপারে মৎস্য কার্যালয় বা অন্য কোনো সংস্থা তাদের কখনও বাধা দেয়নি।


স্থানীয়রা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, মৎস্য শিকারের সঙ্গে জড়িতরা রেণু পোনা ও ডিম সংগ্রহের মাধ্যমে মাছের সর্বনাশ করছে। বছরের পর বছর ধরে নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে তারা। এতে ইতোমধ্যে পাবনার ৯ উপজেলা থেকে অন্তত ২৫ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে শিগগির বাকি প্রজাতির মাছও চিরতরে হারিয়ে যাবে। 


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রচলিত মৎস্য আইনে অবৈধ রেণু পোনা ও ডিম শিকারিদের এক বছরের জেল এবং ১ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু জেলা ও উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের পক্ষ থেকে অবৈধ সংগ্রহকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। চালায় না কোনো সচেতনতা কার্যক্রমও। 


পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, অবৈধ রেণু পোনা ও ডিম সংগ্রহকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। শিগগির অভিযান চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ