সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

পাবনায় ঋণের কিস্তি পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ



কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নেওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিকমতো না চলায় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঋণ। কিস্তি পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতারা। ঋণ নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার জায়গায় সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে সহায়সম্বল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। আবার অনেকেই ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।


পাবনার সরকারি ও আধা-সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংক, আশা, ব্যুরো বাংলাদেশ, টিএমএস, ইউডিপিএস, গাক, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন, উদ্দীপন, সাজেদা ফাউন্ডেশন, আরআরএফ, এসএসএস, সোনার বাংলা, আকিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ব্যাংক লিমিটেড, অনন্য, প্রতিশ্রুতি, সিদিপ, এনআরবিসি, দিশা, এনডিপিসহ নানা নামে প্রায় ৩০টি এনজিও সংস্থার শাখা রয়েছে। 


এসব শাখা থেকে অনেকেই ঋণ নিয়েছেন। তাদের একজন সাঁথিয়া বাজারের মিঠু স্টুডিও অ্যান্ড ফটোকপি দোকানের মালিক মিঠু হোসেন। তিনি বলেন, ‘তিনটি এনজিও থেকে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছি। মাসিক কিস্তি ৩০ হাজার এবং সাপ্তাহিক কিস্তি দুই হাজার টাকা। ব্যবসা খারাপ হওয়ায় ঘর ভাড়া দিতেও সমস্যা হচ্ছে। এর মধ্যে ঋণ দাতা এনজিও সংস্থার কর্মীরা কিস্তির টাকা নিতে আসে। কিস্তি দেওয়া সম্ভব না জানালে, খারাপ আচরণ শুরু করেন, এমনকি মামলার ভয়ও দেখান। অথচ আগে ব্যবসা ভালো ছিল, সময়মতো কিস্তি পরিশোধও করেছি। ব্যবসায় গতি না থাকার কারণে রীতিমতো বিপাকে পড়েছি।’


স্থানীয় ব্র্যাক ব্যাংক ও ইউডিপিএস থেকে ঋণ নিয়েছেন সাইফান বস্ত্র বিতানের মালিক পোশাক ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, প্রতিষ্ঠান দুটি থেকে ৯ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন তিনি। ঋণের টাকায় কাপড়ের দোকান খুলেছেন। গত ঈদের সময় বেচাকেনা তেমন হয়নি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বেচাকেনা আরও কমে গেছে। প্রতি মাসে ৩৬ হাজার ২০০ টাকা এবং সাপ্তাহিক সাড়ে ৭ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়। বর্তমানে ব্যবসার যা অবস্থা তাতে কিস্তির টাকা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে কিস্তি পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছে। সংসার খরচ সামলে কিস্তি দিতে কষ্ট হচ্ছে। এই কিস্তি দিতে উল্টো আবার ধার-দেনা করতে হচ্ছে।


এই ধরনের অভিযোগ শত শত ব্যক্তির। কেউ ঋণ নিয়ে রিকশা-ভ্যান, সিএনজিচালিত ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ক্রয় করেছেন। কেউবা পোশাক ও সবজির ব্যবসা করছেন। অনেকে হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল পালন করছেন। কিন্তু ঋণের কিস্তি পরিশোধ নিয়ে তারা এখন পড়ছেন বিপাকে। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান তাদের। অন্তত ৩-৪ মাসের জন্য ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখার আহ্বান জানান তারা।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি এনজিওর ব্যবস্থাপক ও মাঠকর্মী জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে ঋণগ্রহীতারা কিস্তি দিতে পারছেন না। কিন্তু অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপে কিস্তি সংগ্রহে মাঠে যেতে হচ্ছে তাদের। কিস্তি সংগ্রহ করতে না পারলে বেতন বন্ধ করে দেয়। কিস্তি আদায় না হলে তাদের বেতন কে দেবেন? আবার কিস্তি সংগ্রহে গেলেও তাদের লাঞ্ছিত করছেন গ্রাহকরা।





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ