সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

অকালে ঝরে গেল ৫টি তাজা প্রাণ, কান্না থামছে না স্বজনদের

 

বিজয়, জিহাদ, সিফাত, শাওন ও শিশির

পাবনার ঈশ্বরদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ যাওয়া পাঁচ বন্ধুর বাড়িতে কান্না থামছে না। স্বজনদের বিলাপে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না প্রতিবেশীরাও। এ বন্ধুরা আড্ডা দিতেন একসঙ্গে, ঘুরতেনও একসঙ্গে। বেড়ানোটা ছিল তাদের সবচেয়ে বড় শখ। শেষমেশ সেই শখই তাদের জন্য কাল হলো। বৃহস্পতিবার রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় একই সঙ্গে প্রাণ গেল পাঁচ বন্ধুর। গুরুতর আহত দু’জন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।


এ বন্ধুদের সবার বয়স ১৯ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। তাদের একজন বিজয়। সংসারে অভাবের কারণে লেখাপড়া ছেড়ে তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গাড়িচালকের কাজে যোগ দেন। ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া ইউনিয়নের আজমপুর গ্রামের আনোয়ার কবিরের ছেলে তিনি। অন্যের গাড়ি চালিয়ে সংসারের হাল ধরেছিলেন। স্বপ্ন ছিল টাকা জমিয়ে এক দিন নিজেই গাড়ির মালিক হবেন। সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল। তাঁকে হারিয়ে বৃদ্ধ বাবা আনোয়ারের আর কিছুই থাকল না।


গতকাল শুক্রবার ছেলের লাশ দাফন শেষ বাড়ি ফিরে আনোয়ার কবির বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। বিলাপের সুরে বলেন, ‘আমার ছেলেটা খুবই স্বপ্নবাজ ছিল। বন্ধুরা ছিল তার আত্মার আত্মীয়। বাড়ি এলেই তাদের নিয়ে ঘুরত। সেই ঘুরে বেড়ানোই তার কাল হলো! আমার বুক খালি করে ও চলে গেল!


গত বৃহস্পতিবার রাতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে প্রাইভেটকারের চালক বিজয়ের মতো প্রাণ হারিয়েছেন শাওন হোসেনও। সলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারি গ্রামের ওয়াজেদ আলীর ছেলে শাওন পড়লেখা করতেন জেলার ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে। তাঁর বাবা ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘আমার ছেলেটা কারিগরি পড়া শেষ করে নিজেই ট্রেনিং সেন্টার করার স্বপ্ন দেখত। বলত, বাবা দেখে নিও আমি এক দিন ভালো করব;  সংসারে কোনো অভাব থাকবে না।’


দুর্ঘটনায় নিহত আরেক বন্ধুর নাম সিফাত হোসেন। তাঁর বাবা ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া ইউনিয়নের আজমপুর গ্রামের মাসুম আলী বলেন, ‘ওরা বন্ধুদের সবসময় একসঙ্গে দেখা যেত। সবার বয়সও এক। ওরা মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকত না। ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখত। একসঙ্গে ঘুরত। মারাও গেল একসঙ্গে।’


রাত ৯টার দিকে ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়কে দুর্ঘটনায় নিহত বাকি দু’জন হলেন দাশুড়িয়া ইউনিয়নের আজমপুর গ্রামের ইলিয়াছ আহমেদের ছেলে শিশির ও রেজাউল করিমের ছেলে জিহাদ। এ ঘটনায় দুই বন্ধু নাইম ও শাহিদ গুরুতর আহত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

স্থানীয় বাসিন্দা আলমাস হোসেন হিটু জানান, বন্ধুদের মধ্যে বিজয় ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে গাড়িচালক হিসেবে কাজ করতেন। ছুটিতে বাড়ি এলে সহপাঠী বন্ধুদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে যেতেন। বৃহস্পতিবারও তিনি ছয় বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে বের হন। বিকেল থেকে ঈশ্বরদীর বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি শেষে রাত ৯টার দিকে দাশুড়িয়া থেকে কালিকাপুরের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়কের পাবনা সুগার মিলের সামনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটি ও গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান। আহত চারজনকে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর দু’জন মারা যান।


ঈশ্বরদী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ হতাহতদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ঈশ্বরদী থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। দুর্ঘটনায় পড়া গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ