সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

ভাঙ্গুড়ায় অবৈধ অর্ধশত করাত কলে সাবাড় হচ্ছে নানান প্রজাতির গাছ

 


ভাঙ্গুড়া প্রতিনিধিঃ পাবনার ভাঙ্গুড়ায় সরকারের অনুমোদন ছাড়াই  প্রায় অর্ধশত স'মিলে (করাত কল) চলছে রমরমা অবৈধ ব্যবসা। এসব মিলে সাবাড় হচ্ছে বনজ, ফলদসহ নানান প্রজাতির গাছ। অনুমোদনহীন এসব মিল মাসের পর মাস চলছে কাঠ চেরাই। 

এসব দেখার  যেন কেউ নেই। ফলে যততত্র গাছ কেটে সাবাড় হচ্ছে এবং পরিবশের ভারসাম্য একদিকে নষ্ট হচ্ছে  অপরদিকে সরকার প্রতিবছর হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। এসব করাত কল সরকারি আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানিয়েছেন  স্থানীয় সচেতন মহল। 

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন আইন ১৯২৭ ও তৎপ্রণীত স'মিল (লাইসেন্স) বিধিমালা ২০১২ অনুযায়ী কোনো স'মিল মালিক লাইসেন্স না নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না। লাইসেন্স নেয়ার পর থেকে প্রতিবছর তা নবায়ন করতে হবে।

উপজেলার বন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ৬টি ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক করাত কল রয়েছে। তার মধ্যে ৬টি করাত কলের লাইন্সেস রয়েছে। কিন্তু সে গুলির নবায়নও হয়নি ঠিক মত। আর বাকী প্রায় অর্ধশত করাত কলের নেই কোন অনুমোদন বা লাইন্সেস ফলে নবায়নের তো প্রশ্নই আসে না।

পৌর সদরের কালিবাড়ি, ভদ্রপাড়া, পার-ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের ভেড়ামারা, অষ্টমনিষা বাজার, খানমরিচ ইউনিয়নের ময়দানদীঘি বাজার , চন্ডীপুর বাজারসহ বিভিন্ন  করাত কল ঘুরে দেখা গেছে, কেউ বা জায়গা ভাড়া নিয়ে কেউ বা নিজস্ব জায়গায় যত্রতত্র করাত কল  স্থাপন করে মালিকরা বছরের পর বছর চালাচ্ছেন তাদের ব্যবসা। 

মিল চালানোর ক্ষেত্রে সরকারের সুনির্দিষ্ট বিধান থাকলেও এ উপজেলায় এ চিত্র একেবারেই বিপরীত। এসব মিলের কোন কোন মালিকরা ২০/২৫ বছর যাবত অনুমোদন ছাড়াই চালাচ্ছেন তাদের স'মিল। লাইসেন্সবিহীন স'মিলগুলো এ উপজেলায় বন্ধ করার কোনও উদ্যোগও চোখে পরেনি। 

তবে এসব মিল চত্বরে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ থরে থরে মজুত করে রাখা হয়েছে। কাক ডাকা ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এসব মিলে বিরামহীন চলছে কাঠ কাটার কাজ। ফলে প্রকৃতি বৃক্ষ হারিয়ে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে , অপরদিকে সরকার হারাচ্ছে মোটা অঙ্কের রাজস্ব।

খানমরিচ ইউনিয়নের ময়দান দীঘি এলাকার স’মিল মালিক, আজিজ, জলিল মৃধা জানান, অনুমোদন বিহীন দীর্ঘদিন ধরে তারা তাদের স’মিল চালাচ্ছেন । এতে কোন সমস্যা হয়নি। কেউ লাইন্সেস করার বিষয়ে কখন কিছু বলেননি। বললে হয়ত লাইন্সেস করার উদ্যোগ নেওয়া হতো। 

কালিবাড়ি এলাকার স’মিল মালিক নিজাম উদ্দীন বলেন, দীর্ঘদিন আমাদের স'মিল চলছে। অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছি এখনও অনুমোদন পাইনি। মিল যখন চালু করেছি তা তো বন্ধ রাখতে পারি না। 

 কালিবাড়ি এলাকার অপর স’মিল মালিক মো. রওশন আলী জানান, তিনি নতুন স’মিল করেছেন কিন্তু অনুমোদনের কোন কাগজ দেখাতে পারেননি।

তবে সচেতন মহল মনে করেন, এভাবে সরকারের অনুমোদনহীন করাত কল (স'মিল) চলায় একদিকে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, বন উজাড় হচ্ছে, অপরদিকে সরকার হারাচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এখনি জরুরি।

এ ব্যাপারে উপজেলা বনবিভাগের ফরেষ্টার মো. জাহিদ হাসান এ উপজেলায় অবৈধ করাত কলের কথা স্বীকার করে  বলেন, মাঝে  মঝে ইউএনওর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানার পাশাপাশি সর্তক করা হয়।

এ বিষয়ে পাবনা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ আহম্মেদ যত্রতত্র অবৈধ করাত কল তৈরি হচ্ছে স্বীকার করে বলেন, অবৈধ স’মিল গুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে । 

এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘অবৈধ করাত কলের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে মোবাইল কোর্ট  পরিচালনা করা হয়েছে, প্রয়োজনে আবারও অভিযান পরিচালনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ