চার বছরের সুরাইয়া খাতুন। মাস চারেক আগেও সমবয়সিদের সঙ্গে ছোটাছুটি, খেলাধুলায় মেতে থাকত সে। জানার আগ্রহ থেকে নানা প্রশ্নে জর্জরিত করত মা-বাবাকে। এইটুকুন বয়সে ঘর ঝাড়ু দেওয়া, জামাকাপড় গোছানো থেকে শুরু করে সব কাজে পটু ছিল শিশুটি। কিন্তু হুট করেই শিশুটির জীবনে নেমে আসে ঝড়!
ছোট্ট সুরাইয়া এখন ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত। দৃষ্টি হারিয়েছে দুই চোখের। হারিয়েছে বাকশক্তিও! শুকিয়ে গেছে শরীর। দুরন্ত সুরাইয়ার শ্বাস-প্রশ্বাস চললেও বিছানা অথবা মায়ের কোলে শুয়ে দিন কাটে ছোট্ট এই শিশুটির। দিনমজুর বাবার পক্ষে একমাত্র মেয়ের অপারেশনের টাকা জোগাড় করা সম্ভব হয়নি!
তাই চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে পাবনার চাটমোহর উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের মল্লিকবাইন গ্রামের জহুরুল ইসলাম-শাপলা খাতুন দম্পতির একমাত্র মেয়ে সুরাইয়ার। চিকিৎসক বলেছেন, দ্রুত অপারেশন না করালে সুরাইয়াকে বাঁচানো সম্ভব নয়। কিন্তু অর্থের কাছে হেরে যাচ্ছেন দরিদ্র মা-বাবা। ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে ছোট্ট সুরাইয়া।
সরেজমিন জানা যায়, সুরাইয়ার বাবা জহুরুল ইসলাম একজন দিনমজুর। মা শাপলা খাতুন গৃহিণী। তাদের এক ছেলে ও মেয়ের মধ্যে ছোট সুরাইয়া। দিনমজুরি করে যে টাকা উপার্জন করেন সেই টাকায় কোনো মতে টেনেটুনে সংসার চালান জহুরুল ইসলাম। চার মাস আগে হঠাৎ করেই চোখে কম দেখা শুরু করেন সুরাইয়া। সেই সঙ্গে অনর্গল বমি হতে থাকে। স্থানীয় চিকিৎসক দিয়ে দেখানোর পর রোগ না সারায় সুরাইয়াকে পাবনা নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিউরো সার্জন সহকারী অধ্যাপক ডা. মুহা. আরিফ রেজাকে দেখানো হয়।
চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর জানান, ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত সুরাইয়া। ঢাকার নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে নিয়ে দ্রুত অপারেশন করাতে বলেন ওই চিকিৎসক। আর অপারেশনের জন্য লাগতে পারে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। চিকিৎসকের এমন কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা হয় শিশুটির বাবা জহুরুল ইসলামের। উপায়ান্তর না পেয়ে সুরাইয়াকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়।
এরপর থেকে বাড়ির বিছানা ও মায়ের কোল আশ্রয় হয়েছে শিশুটির। এক সময়ের দুরন্ত সুরাইয়া এখন একেবারেই নীরব! মেয়ের এমন কষ্ট দেখে অঝোরে কেঁদে চলেছেন মা শাপলা খাতুন। অপারেশনের টাকা জোগাড় করতে স্বজন থেকে শুরু করে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বাবা জহুরুল ইসলাম কিন্তু কোথাও মেলেনি সহযোগিতা! হাল ছেড়ে দিয়েছেন বাবা; কিন্তু হাল ছাড়েননি মা। একমাত্র মেয়েকে বাঁচাতে অসহায় এই দম্পতি আকুতি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সমাজের বিত্তবানদের প্রতি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা শাপলা খাতুন বলেন, আমার হাসি-খুশি মেয়েটি এখন চোখে দেখে না। নিঃশ্বাস চললেও মনে হয় নিথর মৃতদেহ পড়ে আছে। কোনো মা কি এমন দৃশ্য সহ্য করতে পারে? চিকিৎসার টাকাও জোগাড় করতে পারছি না। যে কারণে ঢাকায় নিতে পারিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুতি জানাচ্ছি। তিনিও একজন মা। আমার মতো মায়ের কষ্ট তিনি ছাড়া কেউ বুঝবেন না। দয়া করে আমার মেয়েকে বাঁচান।
ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জান্নাতুল সরকার চম্পা বলেন, পরিবারটি খুবই অসহায়। মেয়েটির জন্য খুবই কষ্ট হয়। ওর মা-বাবার পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভবও নয়। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে তবেই সুরাইয়ার অপারেশন সম্ভব।

0 মন্তব্যসমূহ