রাজশাহী মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া পাবনার বেড়া উপজেলার অদম্য মেধাবী আসিবুর রহমানের পাশে দাঁড়িয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তার নির্দেশে ‘পাবনা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন’ আসিবুরের মেডিকেল কলেজে পড়ার সব খরচ বহন করবে। রাষ্ট্রপতি এই সংগঠনটির আজীবন সভাপতি পদে রয়েছেন।
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোরশেদুল ইসলাম মঙ্গলবার আসিবুরকে তার কার্যালয়ে ডেকে এনে খুশির এই সংবাদটি দেন। একই সঙ্গে তিনি (ইউএনও) উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আসিবুরকে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন।
দরিদ্র দিনমজুরের ছেলে অদম্য মেধাবী আসিবুর রহমানকে নিয়ে গণমাধ্যমে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে পড়ার খরচ নিয়ে চিন্তায় আসিবুর এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্র্রতিবেদনটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
‘শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন’ নামে বেড়ার একটি শিক্ষার্থী সংগঠন প্রতিবেদনটি পাবনা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সাবেক রেল সচিব ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার) সেলিম রেজার দৃষ্টিগোচরে আনে। এতে তিনি বিষয়টি ফাউন্ডেশনের আজীবন সভাপতি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অবগত করেন। রাষ্ট্রপতি ফাউন্ডেশনকে ওই শিক্ষার্থীর মেডিকেল কলেজে পড়ার যাবতীয় খরচ বহনের পাশাপাশি তাঁর পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন।
পাবনা ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সচিব সেলিম রেজা জানান, তিনি রাষ্ট্রপতিকে মেধাবী আসিবুরের বিষয়টি অবগত করেন। এতে রাষ্ট্রপতি তার (আসিবুরের) মেডিকেলে পড়ার যাবতীয় ব্যয়ভার ফাউন্ডেশনকে নিতে বলেন। এখন থেকে পাবনা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন আসিবুরের মেডিকেল পড়ার যাবতীয় খরচ বহন করবে।
বেড়ার ইউএনও মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি মেধাবী আসিবুরের মেডিকেলে পড়ার খরচ বহন করার জন্য পাবনা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনকে নির্দেশ দিয়েছেন। সেলিম রেজা স্যার বিষয়টি আমাকে মুঠোফোনে জানিয়ে এ খবরটি আসিবুরকে দিতে বলেন। এ জন্য মঙ্গলবার আসিবুরকে ডেকে এনে বিষয়টি জানিয়েছি। একই সঙ্গে তার পড়াশোনার প্রাথমিক খরচ বাবদ উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।’
আসিবুরের বাবা বাছেদ মোল্লা বলেন, ‘ছেলের পড়াশোনার খবর নিয়্যা চিন্তায় অস্থির হয়া ছিলাম। এমন সময়ে খবর পাইল্যাম রাষ্ট্রপতি আমার ছেলের পড়াশোনার দায়িত্ব নিছেন। এই আনন্দ আমি ভাষায় প্রকাশ করব্যার পারতেছি না।’
আসিবুর বলেন, ‘আমি এখন থেকে নিশ্চিন্ত মনে পড়াশোনা করতে পারবো। চিকিৎসক হয়ে আমি দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।’
আসিবুর আরও বলেন, ‘বাবা খুব কষ্ট করে আমাদের পড়াশোনা করাচ্ছেন। আমি পড়াশোনায় ভালো দেখে বাবা কখনো আমাকে অন্য কোনো কাজ করতে দেননি। আগে বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতাম। সেই খরচ যোগাতেই বাবার কষ্ট হতো। এখন তো সেই ম্যালা দূর রাজশাহী গিয়ে পড়ালেখা করতে হবে। মাসে নাকি কম করে হলেও আট-নয় হাজার টাকা খরচ লাগবে। এত টাকা বাবা কোথা থেকে যোগাড় করবেন সেই চিন্তায় মনটা খারাপ হয়ে থাকে।’
আলহেরা একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হাকিমুল কবির বলেন, ‘আসিবুর খুবই মেধাবী। যতটুকু পেরেছি ওর জন্য আমরা সহায়তা করেছি। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ও মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। ওর জন্য আমরা গর্বিত।’
উল্লেখ্য, আসিবুর রহমান বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর বাছেদ মোল্লার বড় ছেলে। চরম অভাবের মধ্যেও তিনি এবারের মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় ৭৬.২৫ পেয়ে (মেধাতালিকায় ১ হাজার ৩৬তম) রাজশাহী মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন। গ্রামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ধার নিয়ে তার বাবা তাকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেন।
0 মন্তব্যসমূহ