ফয়সাল মাহমুদ পল্লব: পাবনার আতাইকুলা থানার ভবানীপুর পূর্বপাড়া গ্রামে রাজমিস্ত্রী রিপন হোসেনকে নৃশংসভাবে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিবেশি ভাতিজা মোঃ হৃদয়।
গত ১২ জুলাই এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই গুরুতর আহত রিপনকে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল এবং পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সর্বশেষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। ২৩ জুলাই ঘটনার ১২ দিন পর রিপন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন।
র্যাব বলছে, মাত্র ২শ টাকার লেনদেনকে কেন্দ্র করে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়। স্থানীয় ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আতাইকুলা থানার ভবানীপুর পূর্বপাড়া কতিপয় ছেলে চাঁদা তুলে টিন ও বাঁশ দিয়ে একটি ক্লাব ঘর তৈরী করে। এই ক্লাব ঘর তৈরীতে নিহত রিপন ৫০০ টাকা এবং হত্যাকারী হৃদয় ২০০ টাকা দেয়। পরবর্তীতে নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে ঘটনার অনুমান ১ মাস পূর্বে রিপনের সাথে হৃদয়ের চাচাতো ভাই আয়নালের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব হয়।
এই দ্বন্দ্বের কারনে ক্লাব ঘরটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। নিহত রিপন ক্লাবের ভাঙ্গা অংশ টিন, বাঁশ ইত্যাদি নিয়ে যেতে চাইলে হৃদয়, হৃদয়ের আপন ভাই তালেব এবং চাচাতো ভাই আয়নাল, মুনসুর রিপনকে হৃদয়ের ২০০ টাকা দিতে বলে। রিপন পরে টাকা দিবে বললে এ নিয়ে কথা কাটাকাটি এবং মারামারির উপক্রম হয়। হৃদয়ের মা মারামরি ঠেকাতে গেলে পড়ে গিয়ে বাম হাতে আঘাত পায়। উক্ত ঘটনার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য রিপনকে মারার উদ্দেশ্য হৃদয় স্থানীয় কামার দিয়ে একটি ধারালো হাঁসুয়া তৈরী করে এবং সুযোগ খুঁজতে থাকে।
ঘটনার দিন সকালে রিপন রাজমিস্ত্রীর কাজে যাওয়ার সময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হৃদয় তার হাতে থাকা ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে রিপনের মাথায় কোপ দেয়। রিপন মাটিতে লুটিয়ে পড়লে রিপনের কাঁধ এবং বাম চোখ বরাবর একাধিক কোপ দেয়। লোকজন এগিয়ে আসলে হৃদয় তৎক্ষনাত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
ঘটনার প্রেক্ষিতে রিপনের বৃদ্ধ পিতা মোঃ খোরশেদ মোল্লার অভিযোগে ১২ জুলাই, পাবনার আতাইকুলা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়, যা পরবর্তীতে হত্যা মামলায় রুপান্তরিত হয়।
হত্যাকান্ডের পরপরই মূল হত্যকারী হৃদয় (২২), পিতা-মোঃ রজিম উদ্দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়ায়। তুচ্ছ বিষয়ে এই নৃশংস হত্যাকান্ড এবং হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী হৃদয় পলাতক থাকায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসীসহ পাবনা জেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এই হত্যাকারীকে দ্রুত গ্রেফতারের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানায়।
হত্যাকান্ডের পর থেকেই এই মামলার প্রধান আসামী এবং হত্যাকান্ডের মূল হোতা হৃদয়কে গ্রেফতারে বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে র্যাব। অবশেষে গত ১৪ আগস্ট রাতে র্যাব-৪, সিপিসি-২ এর সহযোগীতায় আত্মগোপনকৃত হৃদয়কে ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানার কাঠগড়া এলাকার একটি ক্যারামবোর্ড খেলার দোকান থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে তদন্তকারী সংস্থার নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ