পাবনা শহরের মডেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিজারিয়ান অপারেশনের পর এক গৃহবধূর নবজাতক উধাও নিয়ে যেসব তথ্য গণমাধ্যমে এসেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করেছেন পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিশেষজ্ঞ শাহিন ফেরদৌস শানু। তাঁর দাবি, রোগীর পেটে কোনো বাচ্চা ছিল না। মেডিকেলের ভাষায় এটাকে 'ফ্যানটম প্রেগনেন্সি' বা ভৌতিক গর্ভধারণ বলে।
আজ মঙ্গলবার পাবনা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। এদিকে ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন কার্যালয় ও সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পৃথক দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক আরিফুর রহমান পরাগ (ডা. শানুর স্বামী), ওই হাসপাতালের পরিচালক সেলিম উদ্দিন ও রোগী আকলিমা খাতুন আঁখির স্বামী বেড়া উপজেলার রতনগঞ্জের নজরুল ইসলাম।
লিখিত বক্তব্যে ডা. শানু বলেন, 'আমার রোগী দাবি করে জরুরি সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য আকলিমা খাতুন আঁখি নামে এক নারী আসেন। তবে তাঁর কাছে আমার কোনো প্রেসক্রিপশন বা কাগজপত্র ছিল না। রোগীর অবস্থা মারাত্মক হওয়ায় গত শনিবার রাত ১০টার দিকে তাঁকে সিজারিয়ান অপারেশন করি। কিন্তু চামড়া কাটার পর বুঝতে পারি, তাঁর পেটে কোনো বাচ্চা নেই। তাৎক্ষণিকভাবে রোগীর স্বামী নজরুল ইসলামকে ডেকে সরাসরি বিষয়টি দেখানো হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'মেডিকেলের ভাষায় এটা ফ্যানটম প্রেগনেন্সি বা ভৌতিক গর্ভধারণ বলা হয়। এমন রোগী খুব কম পাওয়া যায়। তা ছাড়া রোগীর সঙ্গে ২০১৭ সালে জন্ম নেওয়া প্রথম বাচ্চার কাগজপত্র ছিল। জরুরি সময়ে তারিখ দেখা হয়নি। রোগীর স্বজন ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের দায়সারা কর্তব্য পালনের কারণে এটা হয়েছে।' তিনিও সাংবাদিকদের কাছে ভুল স্বীকার করেন।
চিকিৎসক শানুর দাবি, 'নবজাতক উধাও বা চুরি হয়েছে- এমন খবর গণমাধ্যমে এলেও তা সঠিক নয়। বিষয়টি নিয়ে আমি বিব্রত ও লজ্জিত।' ক্লিনিক মালিক সেলিম উদ্দিন পুরোপুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে রোগী ভর্তির করার দায় স্বীকার করেন সংবাদ সম্মেলনে। তবে রোগীর স্বামী নজরুল ইসলামের অভিযোগ, তিনি সব কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন, সেগুলো ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ গায়েব করে দিয়েছে।
পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক সাইফুর রহমানকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। সিভিল সার্জন মনিসর চৌধুরী বলেন, 'আমরা পাবনা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. নার্গিস সুলতানাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছি। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।’
0 মন্তব্যসমূহ