সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

পাবনায় সরকারি কাজে বাধা, পাউবোর প্রকৌশলীকে প্রাণনাশের হুমকি


পাবনা প্রতিনিধি : পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে খননকৃত খালের পাড়ে সড়ক ভেঙে যাওয়ায় স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে মাটি ভরাট ও মেরামত কাজে বাধাদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে অবৈধ দখলদার এবং প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। সরকারি কাজে বাধা না-দেওয়ার জন্য বলা হলে তারা পাউবোর প্রকৌশলীকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। এ ঘটনায় ওই প্রকৌশলী পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পাউবোর অধীনে পাবনা সদর উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়নের মনোহরপুর বড় ব্রিজ থেকে আটঘরিয়া উপজেলার তারাপাশা স্লুইসগেট ও মনোহরপুর বড় ব্রিজ থেকে মক্কেল ফারাজীর বাড়ি পর্যন্ত একটি পানি নিষ্কাশন খাল খনন করা হয়। যা সরকারি খাস খতিয়ান সম্পত্তি। 

খাল খনেন পর অতিবৃষ্টিতে খালের পাড়ে মানুষের যাতায়াতের সড়কটি বিভিন্ন স্থানে ভেঙে যায়। স্থানীয়রা বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মুন্তাজ আলীকে অবগত করেন। গত ২৯ ডিসেম্বর মুন্তাজ আলী সরেজমিন পরিদর্শন শেষে রাস্তা সংস্কার করার জন্য শ্রমিক পাঠান। এ সময় সরকারি কাজে বাধা দেন মনোহরপুর গ্রামের খলিলুর রহমান সরদার ও তার ছেলে সিরাজুল ইসলাম সরদার, হামিদ মোল্লা ও তার ছেলে আসাদ মোল্লা এবং আব্দুর রহিম মোল্লা ও সেলিম মোল্লা। তারা এ সময় জায়গাটি নিজেদের বলে দাবি করেন। 

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নাজমুল হোসেন বলেন, সরকারি কাজে বাধাদান করা হয়েছে এমন খবর আমাকে মোবাইলে জানান মুন্তাজ আলী। বিষয়টি নিয়ে আমি বাধাদানকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে প্রাণনাশের হুমকি দেন। তারা আমার চাকরি খেয়ে ফেলারও হুমকি দেন। বিষয়টি লিখিতভাবে আমি সদর থানায় জানিয়েছি। ইতোপূর্বেও সরকারি এই খাল খননের সময়েও তারা বাধা দিয়েছেন বলে জানান নাজমুল হোসেন।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম, মোতালেব হোসেন, বাবু মেকার, সাফাজ আলী, রমজান আলী, আব্দুল মতিন, আব্দুল আওয়াল, মফিজ উদ্দিন, আব্দুল হাশেম, ইকবাল হোসেনসহ অনেকে বলেন, সড়কটি আমাদের জন্য বিশেষ প্রয়োজন। এতে স্থানীয়দের যোগাযোগ সহজ হয়। আমরা চাই দ্রুত সড়কটি ইট বিছানো হলে সামনের বৃষ্টির আগে ভালো হবে।    

এ বিষয়ে মুন্তাজ আলী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ মানেই সরকারি কাজ। কিন্তু সরকারি সম্পত্তি নিজেদের দাবি করে একটি চক্র বাধা দিয়েছে। প্রভাবশালীরা আমাকেও ফোনে অশালীন ভাষায় কথা বলেছে। বিষয়টি সুরাহা হওয়া প্রয়োজন।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইতিপূর্বে সড়কটিতে মাটি ভরাট ও মেরামতের জন্য ইছামতি নদীর মাটি চেয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সুপারিশে ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন। পরে জেলা প্রশাসন থেকে ইছামতি নদীর খননকৃত মাটি এই সড়কে ব্যবহারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুমতি দেয়।   

এ ব্যাপারে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।  

এ বিষয়ে অভিযুক্তদের একজন মনোহরপুর গ্রামের মৃত ওমেদ মোল্লার ছেলে আব্দুর রহিম মোল্লা বলেন, ওখানে আমাদের জমি আছে। আমাদের জমির উপর দিয়ে রাস্তা করতে দেবো না। যে অভিযোগ দিয়েছে তা সঠিক নয়। নদী বা খালপাড়ের জায়গা আপনাদের কি করে হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের পক্ষে জমির সব কাগজপত্র আছে। যাতায়াতের জন্য অন্য রাস্তা আছে। খালের পাড় দিয়ে রাস্তা হবে না।

উল্লেখ্য, পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মনোহরপুর বড় ব্রিজসংলগ্ন খাল খনন কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় পাউবো ও স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে বলেন, জনগণের যাতায়াতের জন্য খননকৃত খালের উভয়পাড়েই উদ্বৃত্ত মাটি বিছিয়ে মাটির সড়ক তৈরি করা হবে। কিন্তু পরবর্তীতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা এই সড়ক তৈরিতে বাধা দেন। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ