পাবনার সাঁথিয়ায় ধর্ষণের শিকার এক স্কুলছাত্রীর পরিবার এখন গ্রামছাড়া। ধর্ষণের ঘটনার পর থেকে গ্রামবাসীর নানা অপবাদ ও কানাঘুষার কারণে মেয়েটির পরিবার প্রায় একঘরে হয়ে পড়ে। বাড়ির বাইরে বের হতে না পারায় মেয়েটির লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা থেকেও বঞ্চিত হতে হয়।
শুধু তাই নয়, গ্রামবাসীর নানা কুৎসার কারণে মেয়েটির দিনমজুর মৎস্যজীবী বাবা বাধ্য হয়ে নিজ গ্রাম ছেড়ে স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে পাবনা শহরে চলে গেছেন। এখন তিনি সেখানে রিকশা চালাচ্ছেন আর তার স্ত্রী একটি কারখানায় দিনমজুরের কাজ করছেন। দরিদ্র পরিবারটি নিজ এলাকায় ফেরার আকুল আবেদন জানিয়ে অতিদ্রুত ন্যায় বিচার ও দোষি ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
জানা যায়, ২০২২ সালের ৭ মে উপজেলার রায়েকমারী গ্রামের বাসিন্দা নবম শ্রেণির ওই ছাত্রী সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে বিষ্ণুপুর গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে জনি হোসেন তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং ধর্ষণ করে। ওই দিনই মেয়েটির ভাই বাদী হয়ে সাঁথিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ অভিযুক্ত জনি হোসেনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায়। প্রায় তিন মাস জেল হাজতে থাকার পর জনি হোসেন জামিনে মুক্ত হয়ে বর্তমানে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে।
সরেজমিনে মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বসবাসের জন্য তার বাবার মাত্র ২শতাংশ জমি রয়েছে। ওই বাড়ির একটি ঘরের মাঝখানে বেড়া দিয়ে একপাশে তার ভাই-ভাবী থাকে, অন্যপাশে বাবা-মার সাথে সে থাকতো। বিলপাড়ে বাড়ি হওয়ায় তার পরিবার বিলের মাছ ধরে ও দিনমজুরি করে কোনমতে জীবীকা নির্বাহ করে।
মেয়েটির ভাই জানান, তার বোন এখন বাড়িতে থাকেনা। লোক লজ্জার ভয়ে বাবা-মাসহ তার বোনকে গ্রাম ত্যাগ করতে হয়েছে। ইচ্ছে আছে, বোনকে আবার নবম শ্রেনিতে ভর্তি করে লেখাপড়া করানোর। কিন্ত অভিযুক্তর পরিবারটি প্রভাবশালী হওয়ায় তাদেরকে ভয় করে চলাফেরা করছেন। তার দায়ের করা মামলাটি বর্তমান পাবনা আদালতে চলমান রয়েছে।
মেয়েটির ভাই চোখের পানি ফেলে এ প্রতিনিধিকে বলেন, বোনের যে এতোবড় সর্বনাশ করেছে,পরিবারকে গ্রাম ত্যাগ করতে বাধ্য করেছে সেই অভিযুক্তর আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাঁথিয়া থানার এসআই আব্দুর রউফ জানান, আইনের বিধি মেনে দায়িত্ব পালন করছেন। বাকিটা আদালতের এখতিয়ার।
0 মন্তব্যসমূহ