মোঃ নূরুল ইসলাম, চাটমোহর, পাবনা : পাবনার চাটমোহরে পরীক্ষামূলক ভাবে বিনা চাষে নাবি পাট বীজ উৎপাদনের চেষ্টা করে সফলতা পাওয়া গেছে। এ সফলতায় নাবি পাট বীজ উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন কৃষক।
জানা গেছে, চাটমোহরে সাধারণত বারী-১, ও ৯৮৯৭ জাতের তোষা পাট এবং ভারতীয় ও স্থানীয় অন্যান্য জাতের পাট চাষ হয়। পাট চাষে এ এলাকার কৃষক স্থানীয় জাতের পাশাপাশি ভারতীয় বিভিন্ন জাতের পাট বীজ ব্যবহার করেন।
এ এলাকায় অতীতে বিনা চাষে নাবি পাট বীজ উৎপাদনের চেষ্টা করা হয়নি। নাবি পাট বীজ বপনের আদর্শ সময় ১৫ আগস্ট হতে ১৫ সেপ্টেম্বর। এসময় প্রায়শই বৃষ্টি হওয়ায় অধিকাংশ জমি চাষের উপযোগি থাকেনা। ফলে কৃষক নাবি পাট বীজ উৎপাদনে আগ্রহী হন না।
২০২১-২২ অর্থ বছরে পরীক্ষামূলক ভাবে পাবনায় কিছু জমিতে বিনা চাষে নাবি পাট বীজ বপন করা হয়। এতে সফলতা ও পাওয়া যায়। এ সূত্র ধরে এ বছর চাটমোহর উপসহকারি পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার অফিসের সামনের পতিত জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে বিনা চাষে নাবি পাট বীজ বপন করা হয়। এ জমি থেকে আগামি সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পাট বীজ সংগ্রহ করা যাবে। ভাল ফলন পাওয়ারও আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চাটমোহর উপজেলার উপ-সহকারি পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে চাটমোহরে ৩ হাজার কেজি পাট বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে চাটমোহরের ৭০ জন কৃষকের মাধ্যমে ৭০ টি প্লটে ৮ একর জমিতে নাবি পাটবীজ বপন করা হয়েছে। শীঘ্রই এ জমি থেকে পাট বীজ সংগ্রহ করা হবে।
২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ৬ একর জমিতে ৬৫ জন কৃষক ২ হাজার ৮শ কেজি বীজ উৎপাদন করেন। কৃষকের নিকট থেকে পাট অধিদপ্তর ১৬০ কেজি বীজ ক্রয় করে। বাঁকি বীজ এ এলাকার কৃষকেরা ২৫০ থেকে ২৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন এবং নিজেরা জমিতে বপনের মাধ্যমে পাট চাষ করেছেন।
সাধারণত প্রতি দশ শতাংশ জমিতে নাবি পাট বীজ আবাদে ৩৫ থেকে ৪০ কেজি বীজ পাওয়া যায় যার দাম প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। বীজ বপন থেকে বীজ সংগ্রহ করতে সময় লাগে প্রায় পাঁচ মাস।
উপজেলার রামনগর গ্রামের কৃষক এনামুল হক জানান, বর্ষা মৌসুমে নাবী পাট বীজ উৎপাদন করতে ঝুঁকি নিতে হয়। পাট চাষে সামান্য বীজ লাগে। বিধায় কৃষক পাটবীজ উৎপাদন মৌসুমে নাবি পাট বীজ উৎপাদনে আগ্রহ দেখায় না। সেসময় জমিতে তারা অন্য ফসল ফলায় এবং পাট চাষ মৌসুমে বীজ কিনে পাট চাষ করেন।
পাট অধিদপ্তর চাটমোহর পাবনার উপ-সহকারি পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ বাচ্চু মিয়া জানান, নাবি পাট বীজ উৎপাদন মৌসুমে অধিকাংশ জমি বর্ষার পানিতে প্লাবিত হয়ে যায়। এ জমি চাষ উপযোগি হতে অধিক সময়ের প্রয়োজন হয়।
এছাড়া মাঝে মাঝে বৃষ্টি হওয়ায় অনেক জমি চাষের অনুপযোগি হয়ে থাকে। এর মধ্যে নাবি পাট বীজ উৎপাদন মৌসুম প্রায় শেষ হয়ে যায়। ফলে অনেকে জমিতে পাট বীজ বপন করতে পারেন না। বপন করলেও ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাই কৃষক বীজ উৎপাদনে অনাগ্রহী হয়ে পরেন।
চলতি মৌসুমে বিনা চাষে নাবি পাট বীজ আবাদ করে আমরা সফল হয়েছি। এ প্রযুক্তি পাট বীজ উৎপাদনের সম্ভাবনাময় একটা দিক। চাষীদের এ প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দিতে পারলে কৃষক প্রতিকূলতা কাটিয়ে পাট বীজ উৎপাদনে আগ্রহী হতে পারে।
পাবনা জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ জানান, বর্ষা ও বৃষ্টির কারণে নাবী পাট বীজ উৎপাদন ব্যহত হওয়ায় বিনা চাষে পাট বীজ উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। এতে আমরা সফলতাও পাচ্ছি। ভবিষ্যতে এ প্রযুক্তিতে অধিক পাট বীজ উৎপাদন করতে পারলে তা সামগ্রীক পাট চাষে বেশ বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
0 মন্তব্যসমূহ