বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে সংঘর্ষের সময় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করে ভাইরাল হওয়া সেই জামায়াত কর্মী তুষার মণ্ডলকে এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। এজন্য পুলিশ তাকে হয়ে খুঁজছে! কিন্তু ঘটনার পর থেকে গা ঢাকা দেওয়ায় রোববার পর্যন্ত তাকে পাওয়া যায়নি।
পুলিশের একটি সূত্র বলেছে, ঈশ্বরদীতে বিএনপি ও জামায়াতের সংঘর্ষ এবং প্রকাশ্যে গুলি করার ঘটনাটি দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি করায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ খুব মনস্তাত্ত্বিক চাপে আছে। পুলিশ শতভাগ নিরপেক্ষভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। এর অংশ হিসেবে তুষারকে ধরতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে পুলিশ।
শনিবার রাতে তুষারের ভাই তসলিমসহ বিএনপি ও জামায়াতের ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে ঈশ্বরদীতে বিএনপি ও জামায়াত কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে রক্তাক্ত সংঘর্ষের ঘটনায় ঈশ্বরদী থানায় দল দুটির পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতের করা ওই দুই মামলায় ৭০ জনের নাম উল্লেখসহ তিন শতাধিক আসামি করা হয়েছে।
বিএনপির দায়ের করা মামলায় জামায়াতের জেলা আমির ও এমপি প্রার্থী আবু তালেব মণ্ডলকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। শনিবার রাতে ঈশ্বরদী থানা পুলিশের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ও জামায়াতের ওই সংঘর্ষের ঘটনায় উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি মক্কেল আলী মৃধার ছেলে সাহাপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব বাঁধন হাসান হালিম বাদী হয়ে জামায়াত আমির আবু তালেব মণ্ডলকে প্রধান আসামি করে ৩২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০০-১৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে মামলা করেন ঈশ্বরদী উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সাইদুল ইসলাম। তিনি বিএনপির সাহাপুর কৃষক দলের সভাপতি মক্কেল মৃধাকে প্রধান আসামি করে ৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০০-১৫০ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলা দায়ের করা ছাড়াও সংঘর্ষের জেরে শনিবার বিকালে বিএনপি ও জামায়াত পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল এবং প্রতিবাদ সভা করে।
গত বৃহস্পতিবার ঈশ্বরদীতে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের মধ্যে রক্তাক্ত সংঘর্ষে জামায়াতের জেলা আমির আবু তালেবসহ উভয় দলের কমপক্ষে অর্ধশত আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে তুষার মণ্ডল নামে এক যুবক প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর গুলি চালায়। পরে ওই যুবকের পরিচয় নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি অব্যাহত থাকে।
জামায়াত দাবি করে ওই যুবক তাদের দলের কেউ নন। অন্যদিকে বিএনপি নেতারা জোর দিয়ে বলেন, তুষার জামায়াতের কর্মী এবং জামায়াতের জেলা আমির এমপি প্রার্থী আবু তালেব মণ্ডলের ভাতিজা মামুন মণ্ডলের সহযোগী।
এদিকে যুগান্তরের অনুসন্ধানে তুষারের পরিচয় শনাক্ত হয়। তুষার সম্পর্কে এলাকাবাসীসহ পুলিশের কাছেও রয়েছে নেতিবাচক রিপোর্ট। আন্ডার মেট্রিক তুষার ৪ বছর আগে বিয়ে করেন এবং তার একটি এক বছরের শিশু সন্তান রয়েছে। তারা দুই ভাই। তার বিরুদ্ধে নানা অপরাধের রিপোর্ট রয়েছে।
জামায়াতের জেলা আমির দাবি করেন, ওই ছবি বিএনপির বানানো।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুষারকে যে পরিচয় পাওয়া যায় তার বিপক্ষে তারা জোরালো কোনো প্রমাণ পাননি।
এদিকে ঘটনার পর থেকে তুষার গা ঢাকা দিয়েছেন। রোববার বিকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাকে পাওয়া যায়নি।
তুষারের বাবাসহ স্বজনরা জানান, সে কোথায় আছি জানিনা এবং তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।
ঈশ্বরদী থানার ওসি আসম আব্দুন নুর জানান, বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। হামলায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারকারী তুষারসহ সব দোষীদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, তুষার সম্পর্কে ভালো কোনো রিপোর্ট নেই। সে বাউণ্ডুলে। তার বাড়ির অবস্থাও ভালো নয়। পুলিশ তার বাড়িসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে তুষারের ভাই তসলিমসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির ৩ এবং জামায়াতের সমর্থক ২ জন।

0 মন্তব্যসমূহ