সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

ঈশ্বরদীতে ৮ কুকুরছানা হত্যা: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার ফোন পেয়ে থানায় মামলা


পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ চত্বরে ৮টি কুকুরছানাকে বস্তাবন্দি করে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যার ঘটনায় অবশেষে নিশী রহমান (৪২) নামের এক নারীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাতে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বাদী হয়ে এই মামলাটি করেন।

আসামি হলেন নিশী রহমান ঈশ্বরদী উপজেলা ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ স ম আব্দুন নূর মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ইউএলও) আকলিমা খাতুন জানান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে প্রাণী কল্যাণ আইন ২০১৯-এর ৭ ধারায় রাত ৯টার দিকে উপজেলা ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশন কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী নিশী রহমানকে একমাত্র আসামি করে থানায় এজাহার দায়ের করা হয়।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনাটি জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশনে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়ে ভাইরাল হয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে ব্যাপক সমালোচনাসহ তীব্র নিন্দাসহ অপরাধীর শাস্তি দাবি করে লেখালেখি করা হচ্ছে। যে কারণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার ফোন করে এ ঘটনাটি অমানবিক দাবি করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে জানান, এই ঘটনা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।

তাই প্রাণী হত্যায় জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। তাই তাকে শাস্তির আওতায় আনতে মামলা করতে হবে। একই সঙ্গে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও ফোন করে তার পক্ষে মামলা দায়ের করার জন্য ইউএনওকে নির্দেশনা দেন। এছাড়াও এ ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা থেকে এনিম্যাল অ্যাকটিভিস্ট কমিটির একটি তদন্ত টিম ঈশ্বরদীতে এসেছেন।

ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন এজাহারে উল্লেখ করেছেন, গত ১৫ দিন আগে উপজেলা পরিষদের আবাসিকের একটি বাসার সিঁড়ির নিচে একটি কুকুর ৮ টি কুকুরছানা প্রস্রব করে। উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মা কুকুরটি খাবার দিতেন। কিন্তু গত ১ ডিসেম্বর থেকে মা কুকুরটি ছানাগুলোকে না পেয়ে পুরো আবাসিক এলাকাজুড়ে ডাকাডাকিসহ আর্তনাদ শুরু করে। ছানাগুলোকে খুঁজে পেতে আবাসিকগুলোতে ওঠানামা করতে থাকে। পরের দিন সকালে উপজেলার কর্মচারীরা মা কুকুরটি আর্তনাদের কারণ জানতে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।

একপর্যায়ে উপজেলা ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের শিশু ছেলে আফান জানায়, তার মা কুকুরছানাগুলোকে বস্তায় ভরে পাশের পুকুরে ফেলে দিয়েছে। আফানের দেখিয়ে দেওয়া পুকুরে নেমে উপজেলা পরিষদের বাগানের মালি জাহাঙ্গীর বস্তাটি তুলে আনেন। বস্তার মুখ খুলে দেখা যায়, ওই ৮টি কুকুরছানা মারা গেছে।

এরপর বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়ে ভাইরাল হয়ে যায়। দেশে-বিদেশ থেকেও বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র নিন্দাসহ অপরাধীর শাস্তি দাবি করা হয়। তবে অপর একটি সূত্রের দাবি, কুকুরছানাগুলো উপজেলা ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশন কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়ন ও তার স্ত্রী নিশী রহমান উভয় মিলেই বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দিয়েছিল।

এ ব্যাপারে কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়ন বলেন, এই বিষয়ে কোনো কিছুই মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। বিষয়টি অমানবিক। আমি খুবই মর্মাহত ও লজ্জিত।

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে উপজেলা পরিষদের আবাসিক এলাকায় দেখা যায়, অভিযুক্ত নিশি রহমান কোয়ার্টার ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি বলেন, কুকুরটি বাচ্চাগুলো নিয়ে আমাদের বাসার সিঁড়ির নিচে থাকত। খুব বিরক্ত করত। তা ছাড়া নিজের শিশু সন্তানের নিরাপদে রাখতে কুকুরের বাচ্চাগুলোকে বাজারের ব্যাগে ভরে পুকুরের পাশে একটি সাজিনার গাছের গোড়ায় রেখে আসি। কিন্তু কীভাবে কুকুরের ছানা ভর্তি ব্যাগটি পুকুরে পড়েছে, জানি না। তিনি নিজে ছানাগুলোকে পুকুরে ফেলেননি বলে দাবি করেন নিশী রহমান।

ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন জানান, বর্তমানে মা কুকুরটিকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নেওয়া হচ্ছে বিশেষ পরিচর্যা।

এ ব্যাপারে পাবনা আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাড. খায়রুল আলম দুলাল বলেন, দণ্ডবিধির ৪২৯ ধারায় কোনো হাতি, উট, ঘোড়া, খচ্চর, মহিষ, ষাঁড়, বলদ বা ৫০ টাকা বা তার বেশি মূল্যের যেকোনো গবাদি পশু হত্যা, বিষপ্রয়োগ, বিকলাঙ্গ বা অকেজো করে ক্ষতিসাধন করার অপরাধে শাস্তি রয়েছে। এই ধারার অধীনে অপরাধীকে দুই বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যেতে পারে। তবে এই ধারাটি বাংলাদেশ এবং ভারতের দণ্ডবিধিতে অন্তর্ভুক্ত, তবে বিভিন্ন দেশের আইনে এর প্রয়োগ ভিন্ন হতে পারে বলেও জানান এই আইনজীবী।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনিরুজ্জামান জানান, কুকুরছানা হত্যার ঘটনায় ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নকে মঙ্গলবারের মধ্যে গেজেটেড কোয়ার্টার ছাড়তে লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। জেনেছি, তারা ইতোমধ্যে বাসা খালি করে অন্যত্র চলে গেছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ