পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে আরও দুটি ইউনিট নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। বাংলাদেশও এই প্রস্তাবে আগ্রহ দেখিয়েছে। আজ মঙ্গলবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে রাশিয়ার পারমাণবিক কার্যক্রম পরিচালনাকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সেই লিখাচেভ এই প্রস্তাব দেন।
রোসাটমের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সেই লিখাচেভ। বৈঠকে দুই পক্ষ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চলমান কাজে অগ্রগতি, শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের উদ্দেশে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহারের বিষয়ে রাশিয়া-বাংলাদেশ কৌশলগত সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
বিবৃতিতে বৈঠকের বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে লিখাচেভ বলেছেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জিত হতে যাচ্ছে। চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।’
রূপপুরে আরও দুটি ইউনিট নির্মাণের বিষয়ে রোসাটমের মহাপরিচালক বলেন, ‘বর্তমানে আমরা নতুন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করছি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় আরও দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিট নির্মাণের ব্যাপারে বাংলাদেশ গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বহুমুখী (পারমাণবিক) গবেষণা রিঅ্যাক্টর বা চুল্লি নির্মাণের বিষয়টিও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। গবেষণা চুল্লি বিজ্ঞান ও নিউক্লিয়ার মেডিসিনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমাধান দিতে সক্ষম।’
এদিকে, বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুরে রুশ সহায়তায় নতুন দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিট (ইউনিট-৩ এবং ইউনিট ৪) নির্মাণের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এই নতুন দুই ইউনিট স্থাপনে প্রাথমিক কারিগরি সমীক্ষা পরিচালনা করা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ সময় রোসাটমের মহাপরিচালক নতুন দুটি ইউনিটের নির্মাণকাজ শুরু করতে উক্ত কারিগরি সমীক্ষা দ্রুততম সময়ে শুরু করার প্রস্তাব দেন।
রোসাটমের মহাপরিচালক রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারিগরি বিভিন্ন বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। তিনি জানান, ইতিমধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
বর্তমানে রূপপুর প্রকল্প এলাকায় ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিটের নির্মাণকাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। প্রথম ইউনিটের উৎপাদন চলতি বছরের ডিসেম্বরে মাসের মধ্যে শুরু হবে। তবে ইউনিট-১ ও ইউনিট-২ হতে যথাক্রমে আগামী ২০২৫ ও ২০২৬ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।
রোসাটমের মহাপরিচালকের বরাত দিয়ে মো. নজরুল ইসলাম জানান, নতুন ইউনিট-৩ ও ইউনিট-৪ এর নির্মাণকাজ প্রথম দুই ইউনিটের নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু করা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে অ্যালেক্সেই লিখাচেভ বলেন, ‘বিদ্যমান পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্প্রসারণ আর্থিক ও কারিগরি দৃষ্টিকোণ এবং পারমাণবিক নিরাপত্তার আলোকে অধিকতর লাভজনক ও যুক্তিযুক্ত। এই বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে বিবেচিত।’
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটে ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানির বর্জ্য রাশিয়ায় ফেরত নিতে সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেন। জবাবে রোসাটমের ডিজি প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানির বর্জ্য রাশিয়ায় ফেরত নেওয়ার বিষয়ে রুশ সরকারের পক্ষে নিশ্চয়তা প্রদান করেন এবং এ বিষয়ে যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা যথাসময়ে সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দেন।
এর আগে, গত সোমবার ঢাকা সফরে আসেন রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সেই লিখাচেভ। এই সফরে তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও গ্রিন সিটি আবাসিক এলাকা পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট নির্মিত হচ্ছে। প্রতিটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াট। প্রকল্পের কারিগরি নকশা ও এর ঠিকাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে রোসাটম।

0 মন্তব্যসমূহ