সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

মাত্র এক হাজার টাকার জন্য খুন হন পাবনার সেই যুবক

 


গত ১৩ মার্চ পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়ায় বাড়ি থেকে নিখোঁজের তিনদিন পর মো. আজাদ (২১) নামের এক যুবকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।


রোববার (১৭ মার্চ) এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিপিএম (প্রশাসন ও অর্থ) মাসুদ আলম। এর আগে শনিবার (১৬ মার্চ) তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 


ঘটনার বিবরন থেকে জানা যায়, খুন হওয়া আজাদ হোসেনের মোটরসাইকেল নিয়ে বেড়াতে যান আজাদের আরেক বন্ধু আব্দুস সামাদ ওরফে সম্রাট (২৮)। বেড়াতে গিয়ে মোটরসাইকেলটি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে তা মেরামত করতে দুই হাজার টাকা খরচ হয় আজাদ হোসেনের (২২)। 


মেরামতের দুই হাজার টাকা বন্ধু সম্রাটকে দিতে বলেন আজাদ হোসেন। এরপর সম্রাট এক হাজার টাকা আজাদকে দেন। বাকি এক হাজার টাকা না দেওয়ায় তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। আর সেই টাকার জন্য বার বার চাপ দেওয়ায় বন্ধু আজাদকে গত ১১ মার্চ হত্যা করেন সম্রাট।


নিহত আজাদ পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে এবং গ্রেপ্তারকৃত আব্দুস সামাদ ওরফে সম্রাট একই গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে।


প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, গত ১১ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আজাদ তার ডিসকভারী মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। 


সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজাখুজি করে তার সন্ধান না পেয়ে ১২ মার্চ বিকেলে পাবনা সদর থানায় সন্তানের নিখোঁজ নিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা আব্দুল হাকিম। 


খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ১৩ মার্চ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিখোঁজ আজাদের ক্ষত বিক্ষত মরদেহ দাপুনিয়া ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামের মোশাররফ চেয়ারম্যানের খামারের পাশে লিচু বাগানে পাওয়া যায়। পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা আব্দুল হাকিম বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন।


এরপর ঘটনা তদন্তে মাঠে নামে সদর থানা ও ডিবি পুলিশের যৌথ একটি টিম। তারা তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে অভিযুক্ত আব্দুস সামাদ ওরফে সম্রাটকে শনিবার দুপুরে তার নিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আজাদকে হত্যার কথা স্বীকার করেন সম্রাট। 


পুলিশকে সম্রাট জানায়, তারা পরস্পর ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং একসঙ্গে রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। এক মাস আগে আজাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল নিয়ে বেড়াতে গিয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে মোটরসাইকেল মেরামত বাবদ দুই হাজার টাকা খরচ হয় আজাদের। এর মধ্যে এক হাজার টাকা দেন সম্রাট। বাকি এক হাজার টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই বন্ধুর মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। সেই থেকে অভিযুক্ত সম্রাট কীভাবে তার বন্ধু আজাদকে হত্যা করবে তার সুযোগ খুঁজতে থাকে। 


এরই ধারাবাহিকতায় সম্রাট কৌশলে গত ১১ মার্চ রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার বন্ধু আজাদকে ডেকে নিয়ে মোশাররফ চেয়ারম্যানের খামারের পাশে লিচু বাগানে যায়। সেখানে কথা-বার্তার একপর্যায়ে সম্রাট তার কাছে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে আজাদের গলায় ও চোখের নিচে আঘাত করে। 


পরে নির্মমভাবে আজাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশ টেনে হিঁচড়ে ঘটনাস্থলে থাকা সীম গাছের শুকনা লতাপাতার নিচে ঢেকে রাখে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো চাকু ঘটনাস্থলের পাশে ধান ক্ষেতে ফেলে দেয়। নিহত আজাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও তার গায়ে থাকা রক্তমাখা জ্যাকেট নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। যাওয়ার সময় আজাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন পথিমধ্যে ছয়ঘড়িয়া গ্রামের একটি পুকুরে ফেলে দেয়।


এ ছাড়া আজাদের রক্তমাখা জ্যাকেট এবং মোটরসাইকেলের ডিজিটাল নম্বর প্লেট সম্রাট তার শোবার ঘরে রেখে মোটরসাইকেল নিয়ে নাটোরের লালপুর উপজেলার মোহরকয়া গ্রামে জনৈক ফারুক শেখের বাড়িতে রেখে আসেন সম্রাট। গ্রেপ্তারের পর আব্দুস সামাদ ওরফে সম্রাটের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাকে সঙ্গে নিয়ে নিহতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, মোটরসাইকেল, পরিহিত রক্তমাখা জ্যাকেট ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু জব্দ করে পুলিশ।


এ ঘটনায় হত্যার দায় স্বীকার করে শনিবার বিকেলে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে সম্রাট। পরে তাকে সদর থানার মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ