পাবনার সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়নে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নামে জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরির ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান এবং ইউপি সচিবকে রক্ষার অপচেষ্টা চলছে। এজন্য কম্পিউটার অপারেটর ইমনের ঘাড়ে সব দায় চাপানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এরই অংশ হিসেবে শনিবার রাতে ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান-২ ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ইউনিয়নের কম্পিউটার অপারেটর নিলয় পারভেজ ইমনসহ অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে আমিনপুর থানার ওসি হারুনুর রশিদ জানান, ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে ইউপি সদস্য ও ২ নম্বর প্যানেল চেয়ারম্যান ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে আহম্মদ ইউনিয়নের চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার অপারেটর নিলয় পারভেজ ইমনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে মামলার জন্য এজাহার জমা দিয়েছিলেন। তদন্ত শেষে সেটি মামলায় নথিভুক্ত করা হয়েছে। নিলয়কে গ্রেফতার করতে অভিযান চলছে।
এর আগে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়ন থেকে কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নামে ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়। এ নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যসহ প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। শুধু তাই নয়, মিডিয়ায় প্রচার হলে বিষয়টি টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়।
ইউনিয়ন পরিষদের দেওয়া ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদে দেখা গেছে, ব্যক্তির নাম জাস্টিন ট্রুডো, বাবার নাম পিয়েরে ট্রুডো, মায়ের নাম মার্গারেট ট্রুডো। তিনি ১৯৭১ সালের ২৫ ডিসেম্বর পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। পরে ওই ভুয়া জন্মসনদ বাতিলের কথা জানান রেজিস্ট্রার জেনারেল যাহিদ হোসেন। একই সঙ্গে সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়নের জন্ম নিবন্ধন সংক্রান্ত সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
এ ঘটনায় রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিস থেকে পাবনার জেলা প্রশাসককে তদন্ত করে ৫ কার্যদিবসের মাধ্যমে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। নির্দেশ পেয়ে পাবনার জেলা প্রশাসক স্থানীয় সরকার বিভাগ পাবনার উপপরিচালক সাইফুর রহমানকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় হতে ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মোল্লা ও সচিব আওলাদ হাসানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে প্রশ্ন উঠেছে, এমন একটি চাঞ্চল্যকর এবং গুরুতর ঘটনার দায়ভার শুধুমাত্র কম্পিউটার অপারেটরের ঘারে চাপানোর চেষ্টা নিয়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুজানগর উপজেলার একটি সূত্র বলেন, জন্ম নিবন্ধনের জন্য কোনো আবেদন আসলে সেটি সচিব এবং চেয়ারম্যান অনুমোদন দেওয়ার পর কম্পিউটার অপারেটর প্রিন্ট দেন। এক্ষেত্রে কম্পিউটার অপারেটর ইমনের এককভাবে করার কোনো ক্ষমতা নেই। তাছাড়া পাসওয়ার্ড এবং ইউজার নাসহ ওটিপি থাকে সচিবের কাছে।
সূত্রটি আরও জানায়, গত চার বছর ধরে কম্পিউটার অপারেটর সংশ্লিষ্ট সবার বিশ্বস্ত ছিলেন। সব অপকর্ম তারা সংশ্লিষ্টরা মিলে মিশেই করতেন। এখন নিজেদের বাঁচানোর জন্য সব দোষ ইমনের ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টা চলছে। অবস্থা বেগতিক বুঝে এখন ইমন পরিষদের কেউ নয় বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত বছরের শেষের দিকে আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন মিয়া মারা যান। এরপর থেকে ইউপি সদস্য (মেম্বার) আব্দুর রউফ মোল্লা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু ইউনিয়নের নানা কাজকর্ম ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আওলাদ হাসানের হাতেই থাকে। সচিবের তদারকিতে পরিষদের চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার অপারেটর নিলয় পারভেজ ইমন টাকার বিনিময়ে সেবা গ্রহীতাদের কাজ করে দিতেন। ইমন কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও জন্ম নিবন্ধনসহ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ সেবার ক্ষেত্রে ওটিপি নম্বর সচিবের কাছে থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাস্টিন ট্রুডোর নামে যে জন্ম নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে সেটির প্রিন্ট দেওয়া হয়েছে রাত ৯টায়। কাজেই ওই সময় ওটিপি নম্বর সচিব না দিলে ইমন তা কোথায় পেয়েছে।

0 মন্তব্যসমূহ