।। এবিএম ফজলুর রহমান।।
তত্ত্ব, তথ্য ও বিবেকি সাংবাদিকতায় যার নাম আম আজও জ্বলজ্বল করে তিনি হলেন পাবনার শফিউর রহমান খান। সংক্ষিপ্ত জীবনে কর্মগুণে যেভাবে নিজেকে তিনি সমৃদ্ধ করেন, তাই পাবনার সাংবাদিকসহ সাধারন মানুষ আজও তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। স্বাধীনতা পুর্ব পরবর্তিতে উত্তরাঞ্চলের মফস্বলের সবচাইতে জনপ্রিয় সাংবাদিকদের একজন ছিলেন শফিউর রহমান খান।
ব্যক্তিজীবনের নির্ভীকতা ও সততা তার লেখাকে প্রভাবিত করেছে, লেখার মধ্যে তিনি কোনোদিন মিথ্যার প্রশ্রয় নেননি দেননি। তার দৃষ্টি ছিল গণমুখী। জনগণের কথা বলার জন্যই তিনি লেখনী হাতে নিয়েছিলেন। জনগণের ভাষায় তিনি কথা বলতেন। শফি ভাই ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন অত্যন্ত সাদামাঠা। বিলাস ও বাহুল্যকে তিনি কোনোদিন কাছে ঘেঁষতে দেননি। কোন আসবাব ছাড়াই সজ্জিত ছিল ‘ সাপ্তাহিক পাবনা বার্তা’ অফিস বা তার ব্যক্তিগত বসার ঘরখানি। পাবনার সাংবাদিকতা, শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষের মনের মনি কোঠায় আজও স্মৃতিতে অম্লান জেলার সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃত শফিউর রহমান খান।
আজ ৩১ জুলাই তার ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৩১ সালের ২৩ ডিসেম্বর পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার টাংবাড়ী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। নানা দুর্যোগ ও প্রতিকুল অবস্থার মধ্যে দিয়ে শিক্ষা জীবন শেষ করেন। ১৯৮০ সালে পাবনা থেকে সর্বপ্রথম ‘পাবনা বার্তা’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। এর পর ১৯৯১ সালে পাবনা থেকে প্রথম দৈনিক পত্রিকা ‘দৈনিক ইছামতি’ প্রকাশ করেন।
দিনটি পালন উপলক্ষে পাবনা প্রেসক্লাব ও তার পারিবারিক নানা কর্মসূচি নিয়েছে। সকাল এগারোটায় ইছামতি কার্যালয়ে পবিত্র কোরআনখানি। এ ছাড়া দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। সন্ধ্যায় পাবনা প্রেসক্লাবে স্মরণসভা বাদ আসর দৈনিক সিনসা স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
মাওলানা আব্দুল হামি খান ভাসানীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ শফিউর রহমান খান সাধারণ মানুষের কথা তুলে ধরতে উদ্যোগী ছিলেন জীবনের শুরু থেকেই। তিনি সারাজীবন মানুষের জন্য কাজ করেছেন। মানবতাবাদী চেতনায় উজ্জীবিত মানুষটি জীবনে কোনদিন অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি।
শফিউর রহমান খানের ছদ্মনাম (লেখক নাম) ছিল এস আর খান। ১৯৫৩ থেকে ৫৮ সাল পর্যন্ত দৈনিক ইত্তেহাদের ফরিদপুরস্থ নিজস্ব সংবাদদাতা, দৈনিক মিল্লাত, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক আওয়াজ পত্রিকায় ফরিদপুরস্থ নিজস্ব সংবাদদাতা ছিলেন। ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত পাবনা পত্রিকা এবং একই বছর ঢাকার সাপ্তাহিক আমাদের কথা‘র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৮৪ সালে সাংবাদিকতায় যমুনা সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯২ সালে পাবনা জেলা সাহিত্য পরিষদের ভাস্কর উপাধি এবং ১৯৯৪ সালে সাংবাদিকতায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ উত্তরণ পুরস্কার পান।
শফিউর রহমান খান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা, পাবনা জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক, আঞ্জুমান মফিদুল, পাবনা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ এডিটরস ফোরামের সদস্য, ভাসানী স্মৃতি পরিষদ, পাবনা জেলা শাখার সভাপতি, বাংলাদেশ আঞ্চলিক সংবাদপত্র পরিষদের সহসভাপতি এবং পাবনা প্রেসক্লাবের সদস্য ছিলেন।
এ ছাড়া রাজনৈতিক জীবনে তিনি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর অনুসারী ছিলেন। ব্যক্তি জীবনে শফিউর রহমান খান ছিলেন অবৈষয়িক ও কিছুটা উদাসীন। তার আপন জগত সংবাদপত্রের লেখনির ব্যাপারে সজাগ থাকলেও স্ত্রী পুত্র ও পরিবারের প্রতি ছিলেন বেখেয়ালী। বহু বাম ঘারানা রাজনৈতিকনেতার সান্নিধ্য পাওয়া ব্যাক্তি যেমন সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ, সাবেক মন্ত্রী সিরাজুল হোসেন খান, সুনীল গুপ্ত, আব্দুল মান্নান ভূইয়া, সৈয়দ দিদার বখত ছিলেন তার ব্যক্তিগত বন্ধু।
পাবনায় প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশ করে পাবনার ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। এ ছাড়া বর্তমান প্রজন্মে যে সব সাংবাদিক রয়েছেন তার অধিকাংশই শফিউর রহমান খানের কাছে হাতে খড়ি নিয়েছেন। তাই এদিনটিকে পাবনার সাংবাদিকরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে তাকে।
দিনটি পালন উপলক্ষে পাবনা প্রেসক্লাব ও তার পারিবারিক নানা কর্মসূচি নিয়েছে। সকাল এগারোটায় ইছামতি কার্যালয়ে পবিত্র কোরআনখানি। এ ছাড়া দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। সন্ধ্যায় পাবনা প্রেসক্লাবে স্মরণসভা বাদ আসর দৈনিক সিনসা স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
লেখক : এবিএম ফজলুর রহমান, সভাপতি, পাবনা প্রেসক্লাব।
0 মন্তব্যসমূহ