মোঃ নূরুল ইসলাম, চাটমোহর, পাবনা : প্রচন্ড গড়মে পাবনার চাটমোহরে হাত পাখার কদর বেড়েছে। অধিকাংশ এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ গরমের তাড়নায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। প্রচন্ড গরমে মাঝে মধ্যেই দেখা দিচ্ছে বিদ্যুতের আশা যাওয়ার ভেলকিবাজী। এর ফলে মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়ে চলেছে চড়মে।
প্রচন্ড গরমে প্রশান্তির পরশ দিতে চাটমোহর পৌরসদরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে বাহারি রঙ্গের হাত পাখা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, তালের পাখা, সুতায় বুনানো পাখা, বিভিন্ন কাপড়ের তৈরি হাত পাখা। তাছাড়াও প্লাস্টিকের তৈরি পাখাও বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
পাবনার চাটমোহরের মুক্তিযোদ্ধা সহায়ক শ্রী বিশ্বনাথ দাস (৭২) তিনি এখন হাতপাখা বিক্রেতা। শ্রী বিশ্বনাথ দাস পৌর সভার ২ নং ওয়ার্ডের ছোটশালিখা মহল্লার বাসিন্দা। তিনি জানালেন, একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার সাপলাই করেছি আমি। সে হিসেবে আমি একজন সহায়ক মুক্তিযোদ্ধা। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করতে পারি। কিন্তু সার্টিফিকেট না থাকায় আমি নিজেকে যুক্তিযোদ্ধা দাবি করতে পারছিনা। সহায়ক মুক্তিযোদ্ধা, আপাত দৃস্টিতে তিনিও একজন শ্রদ্ধাভাজন মুক্তিযোদ্ধা।
তিনি নিজের হাতে বানানো বাচ্চাদের খেলনা ঢোল, তাল পাখা, বেতের কাঠা তৈরী করে চাটমোহরের পৌর শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় পায়ে হেটে বিক্রি করেন। তিনি আরো বলেন, উপজেলার গ্রামগঞ্জে আজ বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবার কারণে ঘরে ঘরে ঘুরছে বিদ্যুৎ চালিত পাখা। তাই আমাদের পাখা বিক্রি আগের চেয়ে অনেকটাই কমে গেছে। তারপরও প্রচন্ড গরমে পাখার চাহিদাও রয়েছে। বিশেষ করে বাস যাত্রী, হাটবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী ও দরিদ্র শ্রেণীর মধ্যে এই পাখা ক্রয়ের চাহিদা বেশি।
বিশেষ বড় একটি তাল পাখা দেখিয়ে তিনি বলেন, এটা অর্ডারের। মূল্য ১২০০ টাকা। ছোটোগুলো ১২-১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। কাপড় দিয়ে রাউন্ড সেলাই করা সেগুলো বিক্রি হয় ২৫-৩০ টাকা। বাচ্চাদের খেলার জন্য ছোট ঢোল ৮০-১০০ টাকা বিক্রি করি। সুস্থ থাকলে আর পন্যগুলো তৈরী করতে পারলে মোটামুটি ভালো ভাবেই সংসার চালাতে পারি। দৈনিক বিক্রি করি ১ হাজার থেকে ১ হাজার দুইশত টাকা। এতে আয় থাকে ৪শত থেকে ৫শত টাকা। এভাবেই ৭০ বছরের একজন সহায়ক মুক্তিযোদ্ধা শ্রী বিশ্বনাথ দাস জীবনের যুদ্ধ করে চলেছেন।
তিনি ১৯৭০ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন। তার দুই মেয়ে এক ছেলে। ছেলেটি স্যালুনের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এক মেয়েকে সিরাগঞ্জের কড্ডারমোড় বিয়ে দিয়েছেন, জামাই জনতা ব্যাংকে কর্মরত আছেন। অন্য মেয়েটির শশুর বাড়ি উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ। এভাবেই চলছে বিশ্বনাথ দাসের জীবন সংসার।
পাখা কিনতে আসা রেজাউল করিম রেজা জানান, মাঝে মাঝে বিদ্যুতের সমস্যা হচ্ছে। তাই ২টি তালপাখা কিনলাম বাসার জন্য। গরম বেশি হলে বাসার সবাই তাল পাখা খোঁজে। পাখা বিক্রেতা বলেন আমার কাছে ১২ টাকা থেকে শুরু করে ১২শ টাকার তাল পাতার পাখা আছে।
বিভিন্ন মানের ও বিভিন্ন দামের পাখাই আমি বিক্রি করি। রেজাউল করিম রেজা আরো বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা সহায়ক শ্রী বিশ্বনাথ দাসের এই জীবন যুদ্ধের সফলতা এবং সুস্থ ও কর্মক্ষম জীবনের প্রত্যাশা করছি।
0 মন্তব্যসমূহ